বিজ্ঞাপন দিন

সাংবাদিকদের জন্য ‘ঈদ মোবারক নয়

পবিত্র ঈদুল ফিতর কড়া নাড়ছে ঘরে ঘরে। মুসলিম বিশ্বের দু’টি প্রধান উৎসবের একটিকে সামনে রেখে বাংলাদেশের সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায়।

নানামুখী সঙ্কটে বিরামহীন সংগ্রামরত মানুষ ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ছোটে আপনজনদের কাছে। সাময়িকভাবে হলেও ভুলে যায় ব্যথা, বেদনা ও কষ্টের অনুভূতিগুলো। সাধ্যমতো নতুন পোশাক পরে ভালো খাবার খেতে চায়। সবার সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। কিন্তু সমাজের দর্পণ হিসেবে যাদের অভিহিত করা হয়, বঞ্চিত মানুষের পে যারা কলমের লড়াই চালান, তাদের ঈদের রঙ কেমন? রাষ্ট্র ও সমাজের বৈষম্য, অসঙ্গতি, মানবাধিকার- মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে যারা গণমানুষকে সজাগ করেন, জাগিয়ে তোলেন- সেই সাংবাদিকদের ঈদ কেমন কাটে, তার খবর ক’জন রাখেন ? দেশের সব পেশার মানুষ এরই মধ্যে কমবেশি বেতন-বোনাস পেলেও মিডিয়ার অনেক হাউজ সাংবাদিকদের বেতন-বোনাস দেয়নি।

হাতেগোনা কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যগুলোতে বোনাস তো দূরের কথা, নিয়মিত বেতন পর্যন্ত দেয়া হয়নি। এ দেশে রিকশাচালক, দিনমজুরেরাও ঈদে বাড়তি আয় করে, বোনাস পায়। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদের দিনটিতে আনন্দে মাতে। গার্মেন্ট শ্রমিক থেকে সব পেশার কর্মীরা উৎসব বোনাস না পেলে কিংবা বিলম্বিত হলে সংগ্রাম করে তা আদায় করেন। আর তাদের সেই সংগ্রামে সহযোগী হন দেশের সাংবাদিক সমাজ।

ঈদপূর্ব মাসাধিককাল গণমাধ্যমে গুরুত্বসহকারে স্থান পায় বেতন-বোনাসের খবর; কিন্তু যারা এ খবর প্রকাশ করেন, ‘প্রেসার গ্রুপ’ হিসেবে ভূমিকা পালন করেন- তাদের খবর কী? এবারের ঈদ যখন দুয়ারে তখন বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ঘোর দুর্দিন। জাতীয় প্রেস কাব, সাংবাদিক ইউনিয়ন ও রিপোর্টার্স ইউনিটির মতো সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনগুলোর কার্যালয়ে শোনা যাচ্ছে হাহাকার। নামকরা অনেক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানেও বঞ্চনাজনিত ােভ ও দীর্ঘশ্বাসে পরিবেশ ভারী। কোন হাউজে কত মাস বেতন বাকি, কোন পত্রিকা, অনলাইন বা টেলিভিশনে বোনাস নিয়ে টালবাহান করছে, এসব হা-হুতাশ গণমাধ্যম কর্মীদের মুখে মুখে। তার ওপর বন্ধ গণমাধ্যমে দীর্ঘ দিন বেকার থাকা সংবাদকর্মীদের নিদারুণ কষ্টগাথা। হতাহত, কারাবন্দী ও নির্যাতিত সাংবাদিকদের পরিবারে নেমে আসা অমানিশার আলোচনা তো আছেই। রাজধানীর বাইরের পত্রিকা ও সাংবাদিকদের অবস্থা আরো সঙ্গিন। বাজারে আগুন লেগে আছে অনেক দিন ধরেই।

অগ্নিমূল্যে দৈনন্দিন নিত্যবাজার করাই সংবাদকর্মীদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে। সরকারি চাকুরেদের বেতন প্রায় দ্বিগুণ করে বাজারের আগুনে ঘি ঢালা হয়েছে। তরিতরকারি, পেঁয়াজ-মরিচ থেকে শুরু করে নিত্যপণ্য সীমিত আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। পরিবহন ভাড়া ও বিদ্যুৎ-গ্যাসের দাম বাড়িয়ে মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর প্রতি আরেক দফা নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন করা হয়েছে। আর এ নিষ্ঠুরতার করুণ শিকার বেকার ও অর্ধবেকার সংবাদকর্মীরা।

এ তো গেল আর্থিক দিক। অন্য দিকে রয়েছে নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র। ঘরে-বাইরে নিরাপত্তাহীনতা। দেশ যখন ঈদুল ফিতরের উৎসবে মাতবে, তখন সাংবাদিকরা নির্ভীক ভাবে ছুটে চলেন সংবাদের পিছনে। 

 

আপেল বসুনীয়া

সম্পাদক ও প্রকাশক

চিলাহাটি ওয়েব ডটকম