বিজ্ঞাপন দিন

জলঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস দালালদের কাছে জীম্মি

ফরহাদ ইসলাম,জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর জলঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিস দালাল চক্রের হাতে জীম্মি। নতুন সংযোগের নামে চলছে লাখ লাখ টাকার সংযোগ বাণিজ্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্দ্যেগ ঘরে ঘরে বিদ্যুতয়ান প্রকল্পকে পুঁজি করে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি অফিসের তালিকাভুক্ত ইলেক্ট্রেশিয়ান ও অসাধু কিছু কর্মচারী মেতে উঠেছে এসব বানিজ্যে। তাদের এই লাগামহীন দুর্নীতির প্রতিবাদে মানববন্ধন ও লিখিত অভিযোগ করেও মেলেনি কোন প্রতিকার। দালাল ছাড়া নতুন কোন সংযোগের কাজ হয় না এ অফিসে। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী সারাদেশে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের অংশ হিসেবে চলতি বছরের আগামী জুন মাসের মধ্যে জলঢাকা উপজেলায় শতভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার জন্য কাজ করছে নীলফামারী পলী বিদ্যুৎ সমিতি। জুন মাসের মধ্যে জলঢাকা উপজেলায় ৩৭টি প্যাকেজে ৬৬৬টি লটে ভাগ করে প্রায় ১৬,০০০ হাজার পরিবারের মাঝে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার লক্ষমাত্রা নিয়ে কাজ শুরু করেছে সমিতি। অভিযোগ উঠেছে,উপজেলার শতভাগ গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে ডিজাইন তৈরি,বিদ্যুতের খুটি, ট্রান্সমিটার,মিটার স্থাপন,ওয়ারিং ও সংযোগ দেয়াসহ যাবতীয় কাজে দালাল চক্রের মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা গুনতে হচ্ছে সাধারন গ্রাহকদের। এসব দালাল বিদ্যুৎহীন গ্রামে ঘুরে ঘুরে দ্রুত সংযোগ দেওয়ার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। 

আর এসব কাজে সহযোগীতা করছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ইলেক্ট্রেশিয়ানসহ অফিসের কিছু অসাধু -কর্মচারী। এদের হাত থেকে রেহাই পায়নি খুটামারা ইউনিয়নের অন্ধ আনাউ মিয়াও। টাকা কম দেওয়ায় তার পাশের বাড়ীতে সংযোগ পেলেও এখনো সংযোগ পায়নি সে। এ নিয়ে গত ৬ মে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে এসে এজিএম (কম) গোলাম রব্বানীর নিকট অভিযোগ করেন অন্ধ আনাউ মিয়া। দালাল চক্রের হাত থেকে রক্ষা পায়নি ২০১৫ সালে ভয়াভহ টর্নেডোতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ গোলনা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের জুম্মাপাড়া গ্রামের লোকজন। টর্নেডো’র ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে না উঠতেই ওই গ্রামের মানু ও সাদ্দাম নামের দুই দালালের খপ্পড়ে পরে ১১৬ টি পরিবার। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়ার নামে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৫হাজার ২শত টাকা করে হাতিয়ে নেয় তারা। ওই গ্রামের আবু বক্কর জানান,হামরা বিদ্যুতের জন্যে মানু ও সাদ্দামকে ৫ হাজার ২শত টাকা দিছি,৬ মাস পার হয়য়া গ্যালো এখনও কোনও খবর নাই। বিদ্যুৎ অফিসের প্রতি ক্ষোপ প্রকাশ করে জুম্মাপাড়া গ্রামের মুদি দোকানদার রফিজ উদ্দিন বললেন,হামা শুনছি প্রধানমন্ত্রী অল্প টাকায় ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেয়ছে,কিন্তু অফিসের কোনও লোক হামার এলাকা আইসে নাই। তাই সাদ্দাম ও মানুকে টাকা দিয়েছি। একই অবস্থা উপজেলার গোলনা ইউনিয়নের দলবাড়ী গ্রামের একরামুল হকের। 

পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের ইলেক্ট্রেশিয়ান আলমগীর হোসেনের সহযোগিতায় ওই এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে মটর মিস্ত্রি ও দালাল চক্রের সদস্য নাহিদুল ইসলাম ৫৬ পরিবারকে সংযোগ দেওয়ার জন্য প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে ৬ হাজার করে টাকা গ্রহন করেন বলে জানান একরামুল হক। এদিকে গোলনা রশিদপুর এলাকার মনিরুদ্দিন অভিযোগ করেন, দালাল চক্রের সদস্য মোস্তফা আমার কাছে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য ৫ হাজার টাকা দাবি করেছিল, কিন্তু আমি টাকা দিতে না পারায় আমার বাড়ির ওপর দিয়ে বিদ্যুতের লাইন গেলেও আমাকে সংযোগ দেওয়া হয়নি। একই অভিযোগ ওই এলাকার এন্দাদুল হক, আকবর আলীসহ অনেকের। অভিযোগ রয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে বর্তমান কর্মরত এজিএম (কম) উপজেলা জামায়াতের এক শীর্ষ নেতার আত্মীয় হওয়ার সুবাদে জামায়াতের গ্রাম পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে সখ্যতা বেশী। তাই তালিকাভূক্ত ইলেক্ট্রিশিয়ানসহ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে যে দালাল চক্র গড়ে উঠেছে তার অধিকাংশই জামাত-বিএনপি’র সর্মথক। ফলে বর্তমান সরকারের এই যুগান্তকারী পদক্ষেপটি গ্রাম পর্যায়ে প্রশ্নের সমূখিন হচ্ছে এবং ম্লান হয়ে যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্পের সাফল্য। পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম(কম)গোলাম রব্বানী জানান,বিদ্যুতের সংযোগ পেতে একটি পরিবারে জামানত,ওয়ারিং ও মজুরিসহ সর্বোচ্চ খরচ হওয়ার কথা ২হাজার থেকে ২হাজার ৫শত টাকা পযর্ন্ত । 

সেখানে এসব ইলেক্ট্রিশিয়ান ও দালালরা আদায় করছে ৫হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা। আবার অনেক গ্রামের লোকজন বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য আগাম টাকা দিলেও দিনের পর দিনে ঘুরতে হচ্ছে এই দালালদের পিছনে। বিদ্যুৎ সংযোগ না পেয়ে প্রতারিত হয়ে গত ১৯ মার্চ জলঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের সামনে দালালদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ ও মানব্বন্ধন করেন ভুক্তভোগী গ্রাহকরা। দালাল চক্রের কথা স্বীকার করে জলঢাকা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের এজিএম(কমঃ) গোলাম রব্বানী বলেন, দালাল প্রতিরোধে আমি কাজ করে যাচ্ছি এবং মিটিং,প্রচারপত্র বিলিসহ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে মাইকিং করে আমরা গ্রাহকদের সচেতন করার চেষ্টা করছি। দালাল প্রতিরোধে সকলের সহযোগীতা চেয়ে নীলফামারী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জিএম এসএম হাসনাত হাসান বলেন, আমরা মাইকিং করেছি, প্রচার করেছি, রশিদ ছাড়া টাকা না দেওয়ার জন্য।