বিজ্ঞাপন দিন

প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নে ঝড়ে পড়া প্রধান অন্তরায়................ সুজাউদ্দৌলা


ফিচার সবার জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করতে ঝরে পড়া একটি বড় প্রতিবন্ধকতা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গনোপযোগী শিশুরা প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে পাঁচ বছর মেয়াদি প্রাথমিক শিক্ষাচক্র শেষ হওয়ার পূর্বে মধ্যবর্তী যে কোনো সময়ে যে কোনো শ্রেণি থেকে যদি বিদ্যালয় ত্যাগ করে লেখাপড়া ছেড়ে দেয় তখন তাকে ঝরে পড়া বলে। ঝরে পড়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেক বিষয় রয়েছে। আমাদের দেশে শিক্ষার্থীদের অকালে ঝরে পড়া প্রতিরোধ বহুমুখী পদক্ষেপ দেখা গেলেও এখনো শতভাগ সফলতা আসেনি। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ঝরে পড়ার হার আশঙ্কাজনক। ঝরে পড়া রোধে সরকার বিনা মূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরন, উপবৃত্তি প্রদান, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও মিড ডে মিল চালু করার পরও কাঙ্খিত সফলতা আসছে না। এ ছাড়া ঝরে পড়া শিশুদের বিদ্যালয়গামী করার জন্য ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ সহ বেশ কটি এনজিও সংস্থা কাজ করছে। তবে যথাযথ মনিটারিং ও প্রশিক্ষত জনবলের অভাবে এ ক্ষেত্রে এনজিও গুলোও আশানুরুপ ফলাফল দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে ঝরে পড়ার বিষয়টি আমাকে ভীষণ পীড়া দেয়। তাই ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার প্রধান কারন গুলো আমি নোট করার চেষ্টা করছি। আমার পর্যাবেক্ষণে ঝরে পড়ার প্রকৃত কারণগুলো নিম্নরুপ-

 ১ ।অভিভাবকের সচেতনতার অভাব
২। অতি দারিদ্র্য
৩। শিশুবান্ধব ক্লাসরুম পর্যাপ্ত শিক্ষকের অভাব
৪। বাল্যবিয়ে
৫। পরীক্ষাভীতি

ঝরে পড়ার টুকটাক আরো অনেক কারণ আছে। তবে উপরোক্ত কারনগুলোই প্রধান বলে ধরা পড়েছে আমার ক্ষুদ্র পর্যবেক্ষণে। বিশেষ করে দরিদ্র্যতার কারণে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে। এটা যেন প্রতিরোধ করা যাচ্ছে না। পিতার অসুস্থতা বা মৃত্যুজনিত কারণে পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির অভাবে শিশুরা লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে অর্থোপার্জনের ধান্দায় ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ নাম লেখায় টোকাইয়ের তালিকায়। আবার কেউ কেউ স্বল্প বেতনে যোগদেয়  বিভিন্ন বাসাবাড়ি, কলকারখানা বেসরকারি প্রষ্ঠিানের চাকরীতে। কেউ কেউ হয় বিপদগামী। অনেকে আবার  যোগ দেয় বিভিন্ন যানবাহনের হেলপার-কন্ডাক্টর হিসেবে।বলতে দিধা নেই যে, মাসিক ১০০ টাকা হারে উপবৃত্তি দিয়ে অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ধরে রাখা অসম্ভব। বর্তমানে গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্টানগুলোতে ছেলে শিক্ষার্থদের চেযে মেয়ে শিক্ষার্থীদের সংখ্যাধিক্য লক্ষ করা যায়।  এর অর্থ কি দিন দিন ছেলে সন্তানের জন্মহার কমে যাচ্ছে। নাকি  অভাবের তাড়নায় ছেলে শির্থীরা বিভিন্ন শিশুশ্রমে নিযুক্ত হচ্ছে বলেই এহেন অবস্থার সৃষ্টি? ভাবতে হবে খুঁজে বের করতে হবে এর প্রকৃত কারণ।

কথায় বলে-অভাবে স্বাভাব নষ্টক্ষুৎপিপাসায় কাতর শিশুদের স্কুলে ধরে রাখার কল্পনা তোআকাশ কুসুম; কল্পনা বৈ কিছুই নয়। জন্য ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সবাইকে ঢালাওভাবে উপবৃত্তি প্রদানের পরিবর্তে বিদ্যালয়ভিত্তিক তালিকা করে অতি দরিদ্র শিক্ষার্থীদের চাহিদা মাফিক বৃত্তির ব্যবস্থা করা একান্ত আবশ্যক। এতে করে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে বলে বিশ্বাস। এর পাশাপাশি অসচেতন অভিভাবকের লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝানো এবং ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন খুবই প্রাসঙ্গিক। অধিক জন্মহার বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে শিশুবান্ধব ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা শিশুদের মধ্যকার পরীক্ষাভীতি দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে। ২০১০ সালে প্রণীত শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে ৮ম শ্রেণিতে উন্নীতকরন ৫ম শ্রেণির চলমান সমাপনী পরীক্ষা উঠিয়ে দিতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের দূর হবে প্রচন্ড স্নায়ুচাপ সৃষ্টি করা পরীক্ষাভীতি।সন্দেহ নেই যে, লেখাপড়া সমাপ্তির আগেই ব্যাপক সংখ্যক শিক্ষার্থীর ঝরে পড়াডিজিটাল বাংলাদেশ; গঠনের পথে প্রধান বাধা। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সত্যটি যত দ্রুত উপলব্ধি করতে পারবেন ততই মঙ্গল।


মো: সুজাউদ্দৌলা

উপজেলা নির্বাহী অফিসার
জলঢাকা, নীলফামারী।