বিজ্ঞাপন দিন

জলঢাকায় নানান অজুহাতে স্কুল ফাঁকি দিচ্ছেন প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকরা !

ফরহাদ ইসলাম,জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ মিটিংসহ নানান অজুহাতে স্কুল ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে স্কুল পরিচালনা পর্ষদে স্থানীয় জনগনের অংশীদারীত্ব না থাকায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে প্রতিনিয়ত ব্যক্তিগত কাজে সময় কাটাচ্ছেন তারা। শহরে ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ-কর্ম ও ছেলেমেয়েদের স্কুলে আনা-নেয়ায় দেখা যাচ্ছে তাদের। আর এটি বেশি দেখা যায় গ্রামের ভিতরে,পৌর ও ইউনিয়ন এবং যেসব এলাকার রাস্তা খারাপ সেইসব জায়গার স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে। তবে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কিছু দায়িত্বশীল পৌর এলাকার বেশিরভাগ স্কুলের প্রধান শিক্ষক। সরেজমিনে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিযে দেখা যায়, ক্লাস্টার মিটিং, অন্যান্য মিটিং, অফিসের খাতায় স্বাক্ষর করানো, ল্যাপটপ আনা, ক্লাস রুটিন আনতে যাওয়াসহ নানা অজুহাতে বিভিন্ন সময়ে প্রধান শিক্ষকরা স্কুল ফাঁকি দিচ্ছেন। আবার কিছু প্রধান শিক্ষক একই অজুহাতে উপজেলা চত্বরে দিনব্যাপী ঘুরতে দেখা গেলেও সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা তাদের কোনও পদক্ষেপ গ্রহন করছেন না। সকালের মিটিং সেরে আর স্কুলে যাননা অথবা বিকেলে মিটিং থাকলে সকালে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে শহরে এসে ব্যক্তিগত কাজকর্ম সেরে বিকেলে যাচ্ছেন মিটিংয়ে। অফিসের কোন মিটিং থাকলে দেখা যায় সকাল ১০-১১ টার মধ্যে প্রধান শিক্ষকরা স্কুলের খাতায় স্বাক্ষর করে বাড়িতে চলে আসেন। কিন্ত মিটিং শুরুর কথা ছিল বিকেল সাড়ে ৩-৪ টার দিকে। এছাড়াও প্রতি বছর জানুয়ারি মাসের প্রথম থেকে শুরু হয় আরেক ধরনের ফাঁকি। নতুন করে যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন নামীদামী স্কুলে নিজের সন্তানদের নিয়ে ভর্তি, জামা কাপড়, বইখাতা কেনাসহ বিভিন্ন কাজ। বিভিন্ন ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষকরা অভিযোগ করে বলেন, প্রধান শিক্ষকরা সকালে স্কুলে গিয়ে খাতায় স্বাক্ষর করে চলে আসছেন, এরপর তারা আর ফিরছেন না। আবার কোনো কোনো প্রধান শিক্ষক আগের দিন খাতায় স্বাক্ষর করে পরের দিন মিটিং এর কথা বলে সারাদিন আর স্কুলে আসেন না। কিছু কিছু প্রধান শিক্ষক সকাল ১১ টায় স্কুলে গিয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে দুপুরে স্কুল থেকে চলে আসেন। আর এ সুযোগে সহকারী শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ঠিকমত পাঠপ্রদান না করে গল্পের আড্ডায় মেতে ওঠেন। এতে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তারা আরও বলেন, কিছু সহকারী শিক্ষক আছেন যারা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলেন। তারাও বিভিন্ন সময়ে ছুটিসহ নানান সুযোগ পান। এতে করে আমরা যারা সাধারণ সহকারী শিক্ষকরা প্রয়োজনমতো নৈমিত্তিক ছুটিও (সিএল) পাচ্ছি না। গোলমুন্ডা ক্লাস্টারের এক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সপ্তাহের ৭ দিনের মধ্যে ২-৩ দিন স্কুলে থাকেন। এমন সপ্তাহ আছে একদিনও স্কুলে পুরোদিন থাকেননি। সকাল ১০/১১ টার সময় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে সারাদিন উপজেলা না হয় বাজারের থাকেন তিনি। আর এসব বিষয়ে সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা অফিসারদের কাছে মৌখিক অভিযোগ করলেও কোন প্রতিকার হয়নি। পৌরশহরের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক তার পরবর্তী একজন বদলি শিক্ষক রেখেছেন। সরজমিনে গিয়ে জানা যায়,ওই বদলি শিক্ষককে বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরি পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে তাকে রাখা হয়েছে। এসব বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকদের ফোন করলে তারা বলেন ক্লাস্টার মিটিং, অফিসের মিটিং/কাজে বাইরে আছি। আবার কোনো কোনো প্রধান শিক্ষক মোবাইল কল পর্যন্ত রিসিভ করেন না। সার্বিক বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নুর মোহাম্মদ বলেন,কোন শিক্ষক স্কুল ফাঁকি দিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।’’