বিজ্ঞাপন দিন

ডিমলায় চোরাই পথে আসছে রোগাক্রান্ত ভারতীয় গরু

আব্দুল মালেক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ- নীলফামারী জেলা শহর থেকে প্রায় ৬০ কিঃমিঃ দুরে ডিমলা উপজেলার পুর্ব ছাতনাই ও পশ্চিম ছাতনাই ইউনিয়নে অবস্থিত কালীগঞ্জ বাজার। এখানে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট দিয়ে অবৈধভাবে আসছে বিভিন্ন রোগাক্রান্ত ভারতীয় গরু। ভারত থেকে চোরাই পথে আমদানি করা এসব গরুর মাংস জন স্বাস্থ্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবুও বিজিবির চোখ ফাঁকি দিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে শত শত ভারতীয় গরু। জানা গেছে, ভারত থেকে অবৈধভাবে আসা গরুর কোন ধরনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে না। স্বাস্থ্য পরীক্ষা ছাড়াই পাশ্ববর্তী উপজেলা জলঢাকার মীরগঞ্জ হাটে তুলছে, এবং এখান থেকে ঢাকা সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে গরু ব্যবসায়ীরা। রোগাক্রান্ত পশু হাটবাজারে তোলার কারণে দেশীয় গরুর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে হাটে দেশী গরু ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও এইসব গরুর মাংস মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন ডাক্তাররা। এসব গরুর শরীরে বিষাক্ত ইনজেকশন প্রয়োগের ফলে সেগুলো এক থেকে দুই মাসের মধ্যে মারা যায়। ঐ সব রোগাক্রান্ত গরু নিয়ে এসে দেশীয় গরুর সাথে বেধে রাখা হয়। তাতে দেশীয় পশুগুলো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়তে পাড়ে বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দারা। সরেজমিনেও দেখা মেলেনি কোন প্রানী চিকিৎসকদের। শনিবার (০১ ফেব্রুয়ারী) দুপুরে সরেজমিনে ঐ এলাকায় গেলে জানা যায়, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ কতৃক বিট/খাটালের অনুমতি নিয়ে, সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু আনা নেয়া ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে এবং ভারতীয় গরু করিডোরের মাধ্যমে ছাড়পত্র নিয়ে নির্বিঘ্নে বিট/খাটাল প্রথা চালু করেছে প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা। এর অংশ হিসেবে উপজেলার কালীগঞ্জের বিওপি’র অধীনে খাটালের অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবৎ কালীগঞ্জ ও তার বেশ ক'টি বিট/খাটাল বন্ধ থাকলেও স্থানীয় প্রশাসনকে বিভিন্নভাবে ম্যানেজ করে দিনে এবং গভীর রাতে অসংখ্য ভারতীয় গরু তিস্তা নদীর উপর দিয়ে কালীগঞ্জ ও তার শাখা বিট/খাটালে এসে পৌঁছায়। উপজেলা আইনশৃঙ্খলার মিটিংয়েও বারবার খাটাল চালুর কথা উপস্থাপন করলেও বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ তা বন্ধ রেখেছিলেন। বিট/খাটাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইউপি সদস্য বদিউজ্জামান ওরফে (বদি মেম্বর) জানান আমি কিছুই বলতে পারবো না। আপনারা আসছেন ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খানের সাথে কথা বলেন। গত ২৫ জুলাই ২০১৯ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সীমান্ত-২ অধিশাখা, উপজেলার কালীগঞ্জ বিওপির অধিনে সীমান্ত এলাকায় গবাদিপশুর বিট/খাটাল স্থাপন ও পরিচালনার অনুমতি প্রদান করেন। সংশিষ্ট সূত্র জানা যায়, গত কিছুদিন যাবৎ প্রতি রাতেই উপজেলার বেশ ক'টি সীমান্ত দিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চোরাইপথে গরু প্রবেশ করছে। আর এই চোরাই গরু আমদানী সিন্ডিকেটের প্রধান উপজেলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রভাষক আব্দুল লতিফ খান। তিনি ঐ এলাকার বেশ প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। মূলত প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের লোকজনই দাপটের সাথে প্রতিনিয়ত এসব রোগাক্রান্ত গরু অবৈধ ভাবে ভারত থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসছে বলে এলাকাবাসী দাবি করেছেন। নাম না বলা সর্তে অনেকে জানান, প্রতিনিয়ত সীমান্ত দিয়ে শত শত গরু আসলেও ২৫/৩০ টি গরুর করিডোরের মাধ্যমে ছাড়পত্র নিয়ে নির্বিঘ্নে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে। এলাকাবাসী জানান, সীমান্তের এ পয়েন্টগুলো দিয়ে সারা বছরই কম বেশি গরু উঠে। রাত গভীর হলেই দলে দলে তারা ওই এলাকা দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। রাতারাতি লাখোপতি হওয়ার নেশায় এ কাজ করতে গিয়ে ইতোমধ্যে ওই সীমান্তে বেশ কয়েকজন যুবক ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এর হাতে ধরা পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। অনেকে আবার ভারতে জেলের ঘানি টানছেন। আবারও (বিএসএফের) গুলিতে অনেকে মারাও গিয়াছে। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী লোভে পড়ে চোরাই পথে গরু আমদানি করছেন। ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খাঁন, মোবাইল ফোনে জানান, আমি ব্যস্ত আছি এ ব্যাপারে সাক্ষাতে কথা হবে বলেই কল কেটে দেন। পরীক্ষা-নিরিক্ষা ও কোন প্রকার অনুমোদন আছে কি-না এবং এসব রোগাক্রান্ত গরুর কারনে দেশীও গরুর রোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার প্রানী সম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডাক্তার মোঃ মোনাক্কা আলী জানান, সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রানী সম্পদ কর্মকর্তা বলতে পারবে। এবিষয়ে ডিমলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার জয়শ্রী রাণী রায় মোবাইল ফোনে বলেন, আমি বিষয়টি শুনছি, শোনার পর ক্ষতিয়ে দেখছি। তারপরও আপনারা যদি সহযোগিতা করেন, তাহলে প্রমান সহকারে উপর মহলে রিপোর্ট করবো।