বিজ্ঞাপন দিন

তারাগঞ্জে গাভির দুধ নিয়ে বিপাকে খামারিরা

সিরাজুল ইসলাম বিজয়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা দেশের ন্যায় রংপুরের তারাগঞ্জে হোটেল, রেস্তোরাঁ, গণপরিবহন বন্ধ থাকায় গাভির দুধ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন খামারিরা। অর্ধেক দামেও দুধ বিক্রি করতে পারছেন না খামারিরা।এদিকে আয় কমে যাওয়ায় গো খাদ্যের দাম বেশি থাকার কারণে আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে দুগ্ধ খামারিরা। তাই গরুকে ঠিকমতো খাবার দিতে না পারায় হতাশায় ভুগছেন খামারের মালিকরা। রহিমাপুর গ্রামের দুগ্ধখামারি লিটন মিয়া বলেন, মোড় বাড়িত আট টা গরু আছে। প্রতিদিন ৪০ থাকি ৪৫ লিটার দুধ হয়। সরকারের বাহিনীতো হামাক ঘর থাকি বাইর হবার দেওচেনা। হামরা দুধ ব্যাচেবার না পাইলে নেজে কি খামো আর গরুক কি খাওয়ামো। এখোন পর্যন্ত ৩০০’শ লিটার দুধ জমা হইছে। টাকার অভাবে কায়ো দুধ ন্যাওচে না। এক সপ্তাহ থাকি দুইটা বাচুরোক ১৬ লিটার করি দুধ খাওয়াংচো। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজলার পাঁচটি ইউনিয়নে ছোট-বড় মিলিয়ে গরুর খামার রয়েছে প্রায় ৯৫ টি। এছাড়া গৃহপালিত প্রায় ৮৫ হাজার গরু কৃষকের ঘরে আছে। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে এক সপ্তাহের বেশি ধরে গণপরিবহণ, হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁ বন্ধ রয়েছে। ফলে খামারিদের দুধ সরবরাহের জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। উপজেলার ডেইরি খামার সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, তারাগঞ্জে শুধু খামার গুলোতে দৈনিক ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদিত হচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে মিল্কভিটা, আড়ং, প্রাণ ডেইরি, ফার্মফ্রেশ সহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অল্প পরিমাণে দুধ কেনায় রংপুর ডেইরির তারাগঞ্জ ক্রয়কেন্দ্রে দুধ দিতে না পাড়ায় বিপাকে পড়েছেন উপজেলার দুগ্ধ খামারিরা। অনেক খামারি গ্রামের লোকজনকে বিনা মূল্যে দুধ দিচ্ছেন। আবার কেউ দুধ থেকে ছানা তৈরি করে ফ্রিজে রাখছেন। এ অবস্থায় গরু নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন তারা। প্রতিদিন তাঁদের লোকসানের পরিমাণ বাড়ছে। এ বিষয়ে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানান তিনি। ইকরচালী গ্রামের দুগ্ধ খামারি মশিয়ার রহমান বলেন, আমার বাড়িত ২৬ টি গরু আছে। গরু নিয়ে খুব বিপদে আছি। প্রতিদিন দুই মণ করে দুধ হয় গ্রামের মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে খাওয়াচ্ছি। তবুও দুধ নেওয়ার লোক পাচ্ছি না। এভাবে আর কত দিন লোকসান গুনতে হবে আল্লাহ জানে। সরকার তো কর্মহীনদের চাল ডাল আলু তেল দিচ্ছে। খামারিদের দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। দামোদরপুর গ্রামের খামারি সাদেকুল ইসলাম বলেন, গরুর দুধ বিক্রি করি যে আয় হওচে, খারার কিন্তে বাড়ি থাকি আরও দুই অতুলা টাকা দিবার নাগোচে। সরকারি কোন লোক হামার পাশে ঘুরিও দ্যাখে না। এতে করি হামরা মড়মো না বাচমো আল্লাহ ভালো জানে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম বলেন, শুধু তারাগঞ্জে নয় দুধ নিয়ে গোটা দেশের খামারিরা বিপাকে পড়েছেন। তারাগঞ্জের বেশ কয়েকটি খামারি তাদের কষ্টের কথা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও ইউএনওর সঙ্গে কথা হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান লিটন বলেন, খামারিদের এই দুর্দশার কথা সরকারকে অবহিত করা হবে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে অসহায় দুস্থ মানুষের পাশাপাশি খামারিদের পাশে সরকার সহযোগিতা করবেন বলে আশা করেন তিনি।