বিজ্ঞাপন দিন

তারাগঞ্জে ইটভাটার কালো ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় জমির ধান পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি

সিরাজুল ইসলাম বিজয়, তারাগঞ্জ (রংপুর) প্রতিনিধিঃ রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের দোয়ালীপাড়া গ্রামের বাঙ্গালীপুর এলাকায় ইটভাটার নির্গত কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাসে অর্ধশত কৃষকের প্রায় এক শত একর জমির বোরো ধানক্ষেত পুড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ওই প্রতিবাদে কৃষকরা সোমবার উপজেলার আলমপুর ইউনিয়নের খিয়ারজুম্মা নামক এলাকার এলবিএল ইটভাটার সামনে বিক্ষোভ ও মানব বন্ধন করেন। পরে এবিষয়ে তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কাছে উর্বরা কৃষি জমি ও ফসলের ক্ষতির কারণে ওই ইটভাটাটি বন্ধের দাবী জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, আলমপুর ইউনিয়নের খিয়ারজুম্মা ও বাঙ্গালীপুর এলাকার জমি নিচু হওয়ার কারণে বোরোধানের বাম্পার ফলন হয়। ওই এলাকার অনেক কৃষক জমির মালিকের কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে থাকেন বলে একাধিক কৃষক জানান। চলতি বোরো মৌসুমে আর মাত্র দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে চাষিরা ধান কেটে ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছেন। কৃষকদের সেই স্বপ্ন ভেঙ্গে দিয়েছে এলবিএল ইটভাটার কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস।

ক্ষতিপূররণের  দাবীতে ওই ইউনিয়নের খিয়ারজুম্মা, দোয়ালীপাড়া, বাঙ্গালীপুর গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় অর্ধশতাধিক কৃষক তারাগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসে অভিযোগ করেন।

দোয়ালীপাড়া গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম (৪২) বলেন, আমার ১৫ শতক জমির ধান পুড়ে গেছে ইটভাটার মালিক আমাকে এক হাজার পাঁচ শত টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন। একই এলাকার তৈইছোন বেওয়া (৪৭) বলেন, ধানের গাছ পোড়া গেইছে এতে আমার যে ক্ষতি হয়েছে তার টাকা পয়সা কেউ দেয়নি বলে অভিযোগ করেন।

খিয়ারজুম্মা ডাঙ্গী দোলার একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মত অনেকে ক্ষতির ন্যায্য মূল্য পায়নি এই ধানক্ষেতের। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ক্ষতিপূরণের জন্য আবেদন জানিয়েছেন।

এলবিএল ইটভাটার মালিক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার ইটভাটা এলাকায় আরও বেশ কয়েকটি ভাটা রয়েছে। কৃষকদের যদি ক্ষতি হয়ে থাকে তাহলে আমি অবশ্যই ক্ষতিপূরণ পর্যায়ক্রমে দিব। তবে অন্য ইটভাটার মালিকদের সাথেও বসা উচিত। তাহলেই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সমস্যা সমাধান করা সম্ভব হবে।

ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন নিয়ন্ত্রণ আইন ২০১৩ এর ৮ ধারায় বলা হয়েছে কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকার সরকারি বা ব্যক্তিগত বন, অভয়ারণ্য, বাগান, জলাভূমিতে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। আবার ৮ এর দুই ধারায় বলা হয়েছে নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার মধ্যে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমতি বা ছাড়পত্র কিংবা লাইসেন্স প্রদান করা যাবে না।

এর পরেও আইন অমান্য করে তারাগঞ্জে গড়ে উঠেছে ৪৮ টির ও বেশী ইটভাটা। এর মধ্যে ১৫ টি ইটভাটার বৈধ কাগজ পত্র থাকলেও বাকি ইটভাটা গুলি চলছে অবৈধ কাগজ পত্রে আর ক্ষমতার দাপটে। এছাড়াও বর্তমানে বেশ কিছু ইটভাটা এখন পর্যন্ত ইট তৈরি করে যাচ্ছেন।

আলমপুর ইউপি চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদের চৌধুরী বলেন, আমি আমার ইউনিয়নের ইটভাটা গুলো দেখাশুনা করি। আবহাওয়া খারাপ থাকায় আমি খোঁজ নিতে পারিনি। অসাবধানতার কারণে ধোঁয়া উপর দিক দিয়ে বের না হওয়ায় নিচের দিকে বের হলে ধান ক্ষেত পুড়ে যায়। এতে করে আমার এলাকায় গরিব কৃষকদের প্রায় একশত একর জমির ধান পুড়ে গেছে। আমার কাছে তারা অভিযোগ করে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন।

উপজেলা কৃষি অফিসার অশোক কুমার রায় বলেন, ফসলি জমির পাশে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা অনুমোদন দেয়ার কোনো নিয়ম নেই। ভাটা মালিকরা ক্ষমতার বলে যত্রতত্র ভাটা স্থাপন করায় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমিনুল ইসলাম বলেন, কৃষকের ক্ষতি হলে তদন্ত পূর্বক ব্যস্থা গ্রহন করা হবে ওই ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে। এলাকাবাসি প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট সরেজমিন তদন্ত করে ওই ইটভাটা মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ গ্রহনের দাবী জানান।