বিজ্ঞাপন দিন

করোনা মহামারী মোকাবিলায় সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির স্বচ্ছতা ও পর্যাপ্ততা অনুসন্ধান"

     


আজপিয়া আক্তার, জলঢাকা প্রতিনিধিঃ করোনা পরিস্থিতিতে গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত বিভিন্ন পেশার মানুষের জীবিকা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। করোনা মহামারি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী দেশও এ দুর্যোগ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। জনসমাগম এড়াতে এবং মানুষের গতিবিধি সীমিত ও নিয়ন্ত্রিত রাখতে স্বল্পকালীন ও দীর্ঘকালীন লকডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি ঠেকাতে ‘লকডাউন’ কর্মসূচি অত্যন্ত কার্যকর পদক্ষেপ। কিন্তু স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষেত্রে লকডাউন কর্মসূচির কারণে নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে নিম্নআয়ের মানুষের অনিশ্চিত জীবন-জীবিকার ক্ষেত্রে। 

এ বিষয়ে কথা হয় সমাজকর্মী কাঞ্চন রায়ের সাথে। তিনি বলেন, করোনাকালীন সময়ে শ্রমের  সময়মতো ও ন্যায্য পারিশ্রমিক প্রাপ্তির বিষয়টি অনিশ্চিত। এ খাতের শ্রমিকদের জন্য বিমা বা সংকটকালীন রক্ষামূলক ব্যবস্থা নেই। ফলে করোনাকালের লকডাউন অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিতে যুক্ত নিম্নআয়ের মানুষদের কষ্টকর পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। ‘কাজ নেই তো আয় নেই’-এটি তাদের জীবনের নির্মম বাস্তবতা।

তিনি আরো বলেন  করোনা পরিস্থিতিতে তাদের আয় কমেছে। কারও আয়ের উপায় একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। তাদের খাদ্যতালিকায় নিম্নমানের ও সস্তা খাবার যুক্ত হয়েছে। এ পরিস্থিতি তাদের অর্থনৈতিক, শারীরিক ও মানসিকভাবে দুর্বল করে দিয়েছে। এককথায়, এ পরিস্থিতি তাদের দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

এ ধরনের মানুষের সহায়তার জন্য সরকারের ‘সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের’ অধীনে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম চালু আছে। যেমন : বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা,কাজের বিনিময় খাদ্য, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে কাবিখা, কাবিখা ছাড়াও ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রির কর্মসুচি। এর বাইরে আছে ২ হাজার ৫শত টাকা করে এককালীন সহায়তা কর্মসুচি, ভিজিএফ ৪৫০ টাকা ও জিআর বরাদ্দ ৫০০ টাকাসহ আরও বহুবিধ প্রোগ্রাম।সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের’ অধীনে যে বিভিন্ন ধরনের প্রোগ্রাম চালু আছে তাও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল । জলঢাকার উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নে বিভিন্ন ভাতা পাওয়ার যোগ্যদের মধ্যে ভাতা পেয়েছে আংশিক।

সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কর্মসূচিগুলোর অন্যতম উদ্দেশ্য নিম্ন আয়ের মানুষ যেন অনাহারে না থাকে এবং দারিদ্র্যের মধ্যে যেন নিমজ্জিত না হয়। এজন্য  করোনা পরিস্থিতিতে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের কার্যকর বিস্তৃতি প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বড় বাধা অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি ও অসংগতি। 

সম্প্রতি নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার একটি ইউনিয়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের টাকা জিআর বরাদ্দ হিসেবে ৫০০ জন সুবিধাভোগীর প্রত্যেককে ৫০০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। এবং ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের জন্য ৬ হাজার ৭১৭ জন সুবিধাভোগীকে ৪৫০ টাকা করে প্রদান করা হয়েছে।

তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভিন্ন তথ্য, রমজান উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার (জিআর) এবং ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফ উভয় তালিকায় নাম আছে, এমন সুবিধাভোগীর সংখ্যা অনেক। উভয় বরাদ্দ পাওয়া সুবিধাভোগীরা জিআর বরাদ্দে ৫০০ টাকা ও ভিজিএফ বরাদ্দে ৪৫০ টাকাসহ ৯৫০ টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তারা পেয়েছেন ভিজিএফ বরাদ্দের ৪৫০ টাকা। পবিত্র রমজান উপলক্ষে অসহায় ও গরিব মানুষদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ৫০০ টাকারও হদিস নেই। যদিও কেউ কেউ পেয়েছে,তারাও অর্থের বিনিময়ে পেয়েছে।সামাজিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির প্রধান সমস্যা হলো এটি যাঁদের জন্য করা, তাঁরা পান না। আবার বিতরণ–প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও অপচয় হয়।

এছাড়াও জেলার ৬টি উপজেলাতেই  ২০২০-২০২১ইং অর্থ বছরে দেখা গেছে,করোনা মহামারী প্রতিরোধে বিভিন্ন ভাতা(বয়স্ক,বিধবা,প্রতিবন্ধী,মাতৃত্বকালীন,পুষ্টি ইত্যাদি )  ভোগীদের সরাসরি অর্থ প্রদান না করে,বর্তমানে টাকা সরাসরি সুবিধাভোগীদের মোবাইলে দেওয়া হচ্ছে । এটি একটি সরকারের ভালো উদ্দ্যোগ।কিন্তু এখানেও ভাতাভোগীরা প্রতারনার শিকার হচ্ছে। তাই এক্ষেত্রে সুবিধাভোগীদের মোবাইল ব্যাংকিং সম্পর্কে অবগত করতে হবে।

এজন্য সামাজিক নিরাপত্তার প্রোগ্রামগুলোকে আরও বহুমুখী করা প্রয়োজন, যাতে কোনো ধরনের বিপদাপন্ন মানুষ সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা  বলয়ের সুযোগ-সুবিধা থেকে বাদ না পড়ে। বিপদাপন্ন মানুষের বা তাদের পরিবারের তালিকা হালনাগাদ করা প্রয়োজন, যাতে করে করোনা পরিস্থিতিতে সৃষ্ট নতুন বিপদাপন্ন ব্যক্তি বা পরিবার ওই বলয়ে যুক্ত হতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে, হালনাগাদের কাজটি যেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় না পড়ে।

সম্প্রতি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) পরামর্শ দিয়েছে, করোনা পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের দীর্ঘকালীন আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানটি আরও উল্লেখ করেছে, নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সুরক্ষার স্বার্থে সব প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রীর ওপর কর হ্রাস করা দরকার। অনুমান করা যায়, করোনা দুর্যোগের প্রভাব খুব শিগগির শেষ হবে না। এর প্রভাব এক যুগেরও বেশি সময় থাকতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা অনুমান করছেন।

তাই গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য সুরক্ষা, তথা বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘকালীন সামাজিক নিরাপত্তার কর্মসূচি গ্রহণ এবং তা গুরুত্বের সঙ্গে কার্যকর করা জরুরি। তা না হলে অনানুষ্ঠানিক খাতের ওপর নির্ভরশীল মানুষ এক অমানবিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হবে।

সরকারের নিরাপত্তা কর্মসূচি তৃণমূল পর্যায়ের অবহেলিত জন সাধারনের মাঝে সঠিকভাবে পৌছে দিতে হলে, আমাদের সকলকে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।তাহলেই অবহেলিতরা সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে যুক্ত হবে।

Post a Comment

0 Comments