বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারী জেলা সদর ভুমি অফিসে পাচ্ছে দ্রুত গ্রাহক সেবা নেই এখন আর ভোগান্তি

আব্দুল মালেক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারী জেলা সদর ভুমি অফিসে পাচ্ছে দ্রুত গ্রাহক সেবা। নেই এখন আর ভোগান্তি। জমি সংক্রান্ত বিষয়ে যাবতীয় কাজ ডিজিটাল পদ্ধত্বিতে ঘরে বসেই অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করে দ্রুতগতিতে সমাধান পাওয়ায় আনন্দিত সাধারণ মানুষ। 

 ১৫টি ইইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নীলফামারী সদর উপজেলা। এই সদর উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে এখন আর নেই গ্রাহক হয়রানি। জমির দলিল খাজনা খারিজ করতে ঘুরতে হয় না মাসের পর মাস। এখন বাড়িতে বসে অনলাইনে আবেদন করে ডিজিটালের মাধ্যমে দ্রুতগতিতে জমি সংক্রান্ত বিষয়ে যে কোন দিচ্ছে ভুমি অফিস।

টাকা না দিলে ফাইল নড়ে না, এ চিত্রও আর দেখা যায়না এখন। ইউনিয়ন ভূমি অফিস গুলোতে অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সাধারণ মানুষ ভূমি অফিসে আসতে ভয় পেত। দালালদের উৎপাত ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু এখন আর দালালদের উৎপাত নাই।



সাধারণ মানুষ যে কোনো অভিযোগ দিতে সরাসরি আসে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেলায়েত হোসেনের কাছে। সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে অফিসে খোলা হয়েছে সহায়তা কেন্দ্র, তথ্য বাতায়ন, উপজেলা রাজস্ব আদালত, সুবিন্যস্ত রেকর্ড রুম, মিনি লাইব্রেরি, রাজস্ব আদালত, গণশুনানির ব্যবস্থার মাধ্যমে জবাবদিহিতাসহ তৃণমূলে ভূমি সেবা। সব মিলিয়ে পাল্টে গেছে উপজেলা ভূমি অফিস। এসব উদ্যোগ গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করছেন ভূমি অফিসে আসা সাধারণ মানুষ।



২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২১ তারিখে সহকারী কমিশনার (ভূমি), নীলফামারী সদর হিসেবে বেলায়েত হোসেনের যোগদানের পর থেকে একটু একটু করে পাল্টে দিয়েছেন অফিসের চিত্র। তিনি প্রায় ০৬ মাস ধরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির মধ্য দিয়ে অফিসের সব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন তিনি। এতে করে উপজেলা ভূমি অফিসে বৃদ্ধি পেয়েছে সেবার মান। সেবা পেয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে এখন। দালালমুক্ত পরিবেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভূমি সেবা নিতে আসছে সাধারণ মানুষ।



রয়েছে সহায়তা কেন্দ্র, সেবা গৃহীতারা এখান থেকে তাৎক্ষণিক সেবা পেয়ে থাকেন। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকার আবেদন দাখিলসহ প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে থাকেন। সপ্তাহের প্রতি বুধবার সর্ব সাধারণের জন্য গণশুনানির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এখান থেকে সরাসরি সহকারী কমিশনারের সঙ্গে জমিজমা বিষয়ে মতবিনিময় এবং পরামর্শ পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। জমিজমা-সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার জন্য বাদী ও বিবাদীর নিয়ে সপ্তাহের দুদিন রয়েছে শুনানীর ব্যবস্থা। অফিসে আগত মানুষরা যেন ভূমি বিষয়ে তাৎক্ষণিক আইনকানুন জানতে পারেন সে জন্য রয়েছে মিনি লাইব্রেরি। গণসচেতনতার জন্য ভূমি অফিসের চারপাশে দেয়ালে টাঙ্গানো রয়েছে ডিজিটাল পদ্ধতির ব্যানার, তৃণমূলে ভূমি সেবা পৌঁছানোর লক্ষে পোস্টার ও মাইকিংয়ে প্রচার চালানো হয় মাঝে মধ্যে।



নামজারি সহজীকরণ করা হয়েছে ও টোকেনের মাধ্যমে আবেদন জমা নেয়া হয়। ১৫/২০ দিনের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। স্থাপন করা হয়েছে অভিযোগ কেন্দ্র। যে কেউ অভিযোগ দিতে পারছেন এবং তা দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধানও করা হচ্ছে।



মিসকেস সহজীকরণ করা হয়েছে। আগে ৩-৪ বছর লাগত বর্তমানে তা ৩-৪ মাসের মধ্যে ৩-৪ ভিজিটে মামলা নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকে জানিয়েছেন, এক সময় উপজেলা ভূমি অফিস ঘুষ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছিল। টাকা ছাড়া কোনো কাজ হত না। অফিসের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ভূমি অফিসে ভূমি-সংক্রান্ত সব বিষয়ে জনসাধারণকে অবহিত করতে টাঙানো হয়েছে সিটিজেন চার্টার। দ্রুত সেবা পেতে অফিসের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম, ছবি, মোবাইল নাম্বারসহ বোর্ড টাঙানো হয়েছে। বিনামূল্যে সর্বপ্রকার আবেদন ফরম প্রদান করা হয়। ভূমি আইন সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করতে ও নিজের জমি নিজে রক্ষায় করণীয় সতর্ক বাণী সংবলিত বোর্ড বসানো হয়েছে। সব মিলিয়ে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে উপজেলা ভূমি অফিসে।



এ ব্যাপারে সহকারী কমিশনার (ভূমি) বেলায়েত হোসেন জানান, অফিসে ভূমি-সংক্রান্ত কাজে আসা জনসাধারণের কাংক্ষিত সেবা নিশ্চিত করতে অফিসের ঘুষ দুর্নীতি প্রতিরোধ ও দালালদের দৌরাত্ম্য রোধে বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভূমি মন্ত্রণালয় বর্তমানে ডিজিটালাইজেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ই-নামজারী, অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা, ডিজিটাল রেকর্ডরুম ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে এখন সেবা প্রত্যাশীদের অফিসে ঘুরতে হচ্ছে না। সেবা সহজীকরণের ফলে বাড়িতে বসে থেকেই সব সেবা এখন পাওয়া যাচ্ছে। ডিজিটালাইজেশনের ফলে মনিটরিংও অনেক বেড়েছে। ফলে জনগণ নির্ধারিত সময়ে প্রত্যাশিত সেবা পাচ্ছেন। এখন আর দালালদের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে না কোন গ্রাহককে।