বিজ্ঞাপন দিন

ডোমারে পুলিশের সহযোগীতায় শিশু আলিফ এখন মায়ের কোলে

রতন কুমার রায়, নীলফামারী প্রতিনিধি: নীলফামারীর ডোমার থানা পুলিশের সহযোগীতায় দুই বছরের শিশু আলিফ মায়ের কোল ফিরে পেল। বুকের ধন সন্তানকে নিজের কাছে পেয়ে মা ছাবিনা ইয়াসমিন বেজায় খুশি। আর কিছুই চাওয়ার নাই ছাবিনার। পাঁচ দিন দুরে থাকার পর নীলফামারীর ডোমার উপজেলার গোমনাতী চৌরঙ্গী এলাকা হতে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ের কোলে ফিরেয়ে দেয় ডোমার থানা পুলিশ।

জানা যায়, গত নয় বছর আগে দেবীগজ্ঞ উপজেলার সোনাহার পশ্চিম মুন্সিপাড়া এলাকার ছাবিনা ইয়াসমিন ও ডোমার উপজেলার গোমনাতী চৌরঙ্গী এলাকার রবিউল ইসলাম ঢাকার একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে এক সাথে কাজ করার সুবাদে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে। প্রেমের ছয় মাস পার না হতেই তারা বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এরমধ্যে তাদের সংসারে রোজিনা (৭) ও আলিফ (২) নামে দু’টি সন্তান হয়। নয় বছরের সংসারে ছাবিনা বুঝতে পারে রবিউলকে বিয়ে করে সে নিজের কপাল পুড়িয়েছে। রবিউলের গ্রামের বাড়িতে স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। ছাবিনার প্রতি মাসের বেতনের টাকাও মারধর করে কেড়ে নিয়ে রবিউল মাদক সেবন করে। এভাবেই তাদের সংসারে তিক্ততা বাড়তে থাকে। এরই এক পর্যায়ে গত ১০ জুলাই ছাবিনা কাজে বের হলে, রবিউল মেয়ে রোজিনাকে রেখে, ছোট ছেলে আলিফ ও ঘরের সকল আসবাবপত্র নিয়ে একটি পিক-আপযোগে গ্রামের বাড়িতে চলে আসে। ছাবিনা বাড়িতে ফিরে দেখে ঘরের ভিতরে কোন আসবাবপত্র নাই। মেয়ে রোজিনা কান্না করছে, ছেলে আলিফ কোথাও নাই। মেয়েকে ছাবিনা জিজ্ঞাসা করলে সব জানতে পারে। ছাবিনা স্বামী রবিউলকে বার বার ফোন করেও কোন সাড়া পায় না। এতে রোজিনা দ্রুত মেয়েকে নিয়ে বাবার বাড়ি সোনাহার চলে আসে। ১৫ জুলাই বুধবার বাবা-মাকে নিয়ে ছাবিনা শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ছেলেকে ফেরত চায়। কিন্তু রবিউল ছেলেকে ফেরত না দিয়ে ছাবিনা ও তার বাবা-মাকে হুমকি দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। এতে ছাবিনা নিরুপায় হয়ে ডোমার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করে। ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে রবিউলের বাড়ি গিয়ে আলিফকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। এরপর ওই দিনে রাত ১০ টার দিকে ডোমার থানায় পুলিশ ছাবিনার কোলে ছেলে আলিফকে ফিরিয়ে দেয়। সেখানে মা-ছেলের আবেগঘন মুহুর্ত দেখে উপস্থিত সকলের চোখে পানি চলে আসে। সাত রাজার ধন, বুকের মানিক ছেলেকে পেয়ে পুলিশকে ধন্যবাদ জানায় মা ছাবিনা।

ডোমার থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজার রহমান জানান, মায়ের কোল থেকে দুই বছরের সন্তানকে কেড়ে নেওয়ার কথা শুনে খুব খারাপ লেগেছিল আমার। কারণ এখনো আমি প্রতিদিন আমার মাকে ফোন দিতে দেরী হলেই মা আমাকে ফোন দেয়। কত ভালোবাসা, কত উপদেশ, কত পরামর্শ, যা বলে শেষ করার মতো না। মায়ের কোলের চেয়ে সন্তানের জন্য নিরাপদ আশ্রয় আর হতে পারে না। তাই আমি অভিযোগ পাওয়ার সাথে সাথে শিশুটিকে উদ্ধার করে তার মায়ে কোলে ফিরিয়ে দিয়েছি এবং রবিউল যাতে নিজেকে সুধরে নিয়ে পুনরায় সংসার শুরু করে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তিদের সহায়তায় সে ব্যবস্থাও করার চেষ্টা করছি।