বিজ্ঞাপন দিন

বাঁশের সাঁকোয় জীবন পাড়

বিপিএম জয়, কিশোরগঞ্জ নীলফামারীঃ বাঁশের সাঁকোয় ঝুঁিক নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে ২০ গ্রামের হাজারো মানুষকে। উপজেলার বাহাগিলী ও চাঁদখানা ইউনিয়নের সংযোগ এই সাঁকোর পরিবর্তে দ্রুত আরসিসি ব্রীজ নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের। এলাকার উপর দিয়ে বহমান ধাইজান নদীর উপর অবস্থিত এই বাঁশের সাঁকো। বাব দাদার আমল থেকে এই পথ দিয়ে যাতায়াত করছেন স্থানীয়রা। আগে গরুর লেজ ধরে পাড়াপাড় হতেন পথচারীরা এমনকি অনেকে এভাবে না যেতে পারায় অতিরিক্ত একটি কাপড় সেট সাথে নিয়ে নদী অতিক্রম করে কাঙ্খিত এলাকায় যেতে হতো তাদের। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় ধাইজান নদী হয়ে বাঁশের সাঁকো অতিক্রম করে যেতে হয় ্্্ইসমাইল ময়দানে। সেখানে নামাজ আদায় করেন ৬টি গ্রামের মানুষ। ওই দু’টি ইউনিয়নে একটি ব্রিজের অভাবে এপাড়,ওপাড় ২০ গ্রামের প্রায় ১৫হাজার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এতে সবচেয়ে বেশি, সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে স্কুলগামী কোমলমতি শিশু-কিশোর, বৃদ্ধ ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগী, গর্ভবতী মা। পাশাপাশি অগ্নি দুর্ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী, চিকিৎসাবাহী এম্বুলেন্স যথাসময়ে ঘটনাস্থলে পৌছাতে পারেনা । বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে বাইসাইকেল, রিকসা কিংবা মটরসাইকেল যাতায়াত করলেও ঝুঁকি নিয়ে চলতে হচ্ছে এসব যানবাহনকে। যে কোন মুহুর্ত্বে ধ্বসে যেতে পারে সাঁকোটি। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুম আসলে প্রতিদিনই ঘটে কোন না কোন দুর্ঘটনা। যার কারণে বর্ষার আগেই স্থানীয়রা নগদ টাকা, বাঁশ এবং শ্রম দিয়ে বাঁশের সাঁকো তৈরি করে থাকেন। । বিগত ৫০বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের নিজস্ব উদ্যোগে তৈরি বাঁশের সাঁকোটি যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। স্থানীয় লোকজন প্রতি বছর এলাকার লোকদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে নিজস্ব উদ্যোগে যে সাঁকোটি নির্মাণ করেন, তা ভরা বর্ষা মৌসুমে তলিয়ে যাওয়াসহ ভেসে যায়। একারণে সাঁকোটির পূর্বপাড়ের স্কুল-কলেজ গামী শিক্ষার্থী ও জনসাধারণকে কিশোরগঞ্জ যেতে ৮ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে স্ব স্ব কর্মস্থলে যেতে হয়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা সময়মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে বিলম্ব হয়। আর বর্ষাকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেতে শিক্ষার্থীরা একেবারেই অনীহা। অথচ সাঁকো পেরিয়ে ২শত গজ সামনে গেলে চাঁদখানা সরঞ্জাবাড়ী নগরবন পাকা সড়ক। এ সড়ক দিয়ে উপজেলা সদর ৩ কিলোমিটার পথ। এলাকার বাসিন্দা সুকুমার দাস (৫৫) জানান, বাব দাদার আমল থেকে আমরা বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে নদী অতিক্রম করে আসছি। বর্ষা মৌসুমে যেন কষ্টের শেষ থাকে না। অনেককে নদীতে পড়ে যেতে হয়েছে।অনেকে আশ্বাস দিয়েছেন। মাপজোক করে নিয়ে গেছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। আরেক পথচারী আনোয়ার হোসেন জানান, বর্ষার আগে যাতায়াত সুবিধার জন্য স্থানীয়রা উদ্দ্যেগী হয়ে নগদ টাকা, বাঁশ সংগ্রহ করে থাকেন। পরে সবাই মিলে সাঁকোটি নির্মাণ করা হয়। বাহাগিলী মাছুয়া পাড়া গ্রামের আব্দুস সামাদ,আমিনুর বলেন, সাঁকোর উপর দিয়ে চাঁদখানা সরঞ্জাবাড়ি দিয়ে গেলে কিশোরগঞ্জ উপজেলা শহরের দূরত্ব ৩ কিলোমিটার। ওই নদীর উপর সেতু না থাকায় যানবহন চলাচল করতে পারেনা। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্য হাট-বাজার ও কৃষিকাজের জন্য দু’পাড়ের মানুষকে প্রায় সময় ধরে নদী পার হতে হয় ঝুঁকি নিয়ে। কৃষিপণ্য নিয়ে বাঁশের সাঁকো দিয়ে চলাচল করা যায় না। এ কারণে ৩ কিলোমিটার পথ ৮কিলোমিটার ঘুরে কৃষিপণ্য নিয়ে কিশোরগঞ্জ হাটে যেতে হয়। এতে পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যায়। চাঁদখানা ইউনিয়নের চাল ব্যবসায়ী আনারুল ইসলাম বলেন, সেতু না থাকার কারণে প্রতি বছর দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অনেক জনপ্রতিনিধি ভোটের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন আমাদের যাতায়াতের পথে সেতু নির্মান করে দেওয়ার। কিন্তু নির্বাচনের পর কেউ আর খোঁজ খবর নেয়নি। নগরবন গ্রামের বাসিন্দা শাহজান সিরাজ বলেন, এখানে ব্রীজ হলে যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়। কোথায় যেতে হলে সহজে যানবাহন পাওয়া যায় না। সহজে কেউ আসতে চায় না। এলাকাটিও পিছিয়ে রয়েছে।বর্ষাকালে আট কিলোমিটার ঘুরে যাতায়াত করতে হয় অনেককে। এরফলে দুর্ভোগে পোহাতে হয়। বাহাগিলী ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান শাহ্ দুলু বলেন, ঘাটে সেতু নির্মাণের বিষয়টি সাবেক, বর্তমান সংসদ সদস্য কে অবহিত করা হয়েছে। কিন্তু কোন কাজ হয়নি।বাঁশের সাঁকো স্থাপনে আমরা সহযোগীতা করে থাকি। দ্রুত ব্রীজটি হয়ে গেলে দুর্ভোগ কমে যাবে স্থানীয়দের। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কিশোরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী অফিসার মজিদুল ইসলাম বলেন অফিসিয়ালি যা যা করার দরকার আমরা করেছি এবং একটি প্রকল্প পাঠানো হয়েছে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে। পাস হয়ে আসলে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে।

Post a Comment

0 Comments