বিজ্ঞাপন দিন

থমকে গেছে নীলফামারীতে বাঁশি তৈরীর কারিগরদের জীবনযাত্রা

রতন কুমার রায়,নীলফামারী প্রতিনিধি: “তুমি আর বাজাইওনা তোমার বাঁশের ও বাঁশি প্রেম বিরহে বিনোদিনী কান্দে দিবানিশি ” বাঁশি নিয়ে এ রকম অনেক গান ছোট বড় বহু শিল্পীর কন্ঠে আমারা শুনতে পাই । বাঁশির সুর কার না ভালো লাগে? বাঁশির সুরে মোহিত হয় না এমন লোক সমাজে নেই বললেই চলে। বাঁশি সঙ্গীতের এমন একটি অপরিহার্য যন্ত্র যা ছাড়া সঙ্গীতের পূর্ণতা পায় না। সঙ্গীত যেন অনেকটাই অসমাপ্ত রয়ে যায়।আদিকাল হতেই বাঁশি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে অনেক মানুষ। বাংলার গ্রামগঞ্জে মেলার কথা মনে হলেই প্রথমে চলে আসে বাঁশির কথা। মেলায় গেলে ছোট সোনামনিদের প্রথম পছন্দ বাঁশের বাঁশি। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী করোনা কারনে বৈশাখী মেলাসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় বাঁশি বিক্রি না হওয়ায় থমকে গেছে বাঁশি তৈরীর কারিগরদের জীবনযাত্রা ।

সংবাদ সংগ্রহে বেড়াতে গিয়ে কথা হয়, নীলফামারীর সদর উপজেলার পলাশবাড়ী ইউনিয়নের তরনী বাড়ী বাবুপাড়া গ্রামের মৃত খগেন্দ্রনাথ রায়ের ছেলে ব্রজেন্দ্রনাথ রায়ের সাথে। তিনি জানান, একমাত্র আয়ের পথ বাঁশি তৈরী বন্ধ হওয়ায় হতাশায় আজ দিশেহারা। করোনা যেন তার জীবিকার একমাত্র পথটি বন্ধ করে দিয়েছে।

উদাসী চিত্তে তিনি বলেন, দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর যাবৎ বাঁশি তৈরী করে জীরিকা নির্বাহ করি। বড় ভাই যোগেন্দ্র নাথ রায়ের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে এযাবৎ পেশা ধরে রেখেছি। আমরা দুইভাই ছাড়াও কাকাত ভাইয়েরাও এ পেশার উপর নির্ভশীল। করোনা পরিস্থিতিতে সকল ধরনের মেলা বন্ধ হওয়ায় অন্যান্য বছরগুলোর মতো আর বাঁশি বিক্রি হয় না। আগে বাঁিশ ক্রয়ের পাইকারেরা বাড়ীতে এসে বাঁশি কিনে নিয়ে যেত। কিন্তু গত বছর করোনাকালীন সময় হতে এখন তারা আর আসে না। করোনা সৃষ্টি’র আগে প্রতিদিন এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকার বাঁশি বিক্রি করতাম। প্রতি বাঁশি আকার ভেদে ২০-৫০ টাকায় বিক্রি  হতো। তা থেকে উৎপাদন খরচ বাদে মোটামুটি আয় হতো এবং সংসারের খরচ চলতো। বাঁশি তৈরীতে আমার স্ত্রী আমাকে সহযোগীতা করতো। কিন্তু বর্তমানে বাঁশি বিক্রির কদর না থাকায় আমার স্ত্রী, সংসার চালানোর জন্য অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনক্রমে সংসার খরচ করছি।

উৎপাদনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাঁশি তৈরীতে নলা বাঁশ ব্যবহার করি যা আমাদের এলাকায় না থাকায় পাশর্^বর্তী জেলা পঞ্চগড়ের মালেকা ডাঙ্গা,নাউতারা ও তিস্তা পাড়া থেকে সংগ্রহ করে নিয়ে আসি। তারপর বাঁশ কেটে সাইজ করে রোদে শুকাতে হয়,তারপর দাগ কেটে ছিদ্র করি,আগুনে পুড়িয়ে সিরিজ কাগজ দিয়ে ঘষে সৌন্ধয্যে বৃদ্ধি করি। এরপর বিক্রি করার জন্য বিভিন্ন মেলাসহ পাইকারদের কাছে নিয়ে যাই।

এই দুর্দিনে সরকারী কোন সহযোগীতাও পাইনি। এ পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাড়িয়েছে। জীবিকার তাগিদে অন্য পেশায় গিয়েও নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না।

Post a Comment

0 Comments