বিজ্ঞাপন দিন

মেসের খাবারে আমিষ উধাও।। স্বাস্থ্য ঝুকিতে শিক্ষার্থীরা



মর্তুজা ইসলাম, জলঢাকা প্রতিনিধিঃ মুরগী ও গরুর মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পর আমাদের মেসে মাংস খাওয়া হয় না বললেই চলে। আগে সপ্তাহে ৩ দিন বয়লারের মাংস খাইতাম। দাম বাড়ায় সেটা মাসে ২ বার খাওয়া হয় তাও সাইজ ছোট। মাছ, ডিম আর সবজি এখন আমাদের নিত্য সঙ্গি। যেভাবে দাম বাড়ছে হয়ত মাছ ও ডিম খাওয়া বন্ধ করতে হতে পারে। মিল আগে ২০-২৫ টাকায় হত এখন ৩০-৩৫ টাকা দিয়েও ভালো খাইতে পারছিনা। এমনকি সবজির পরিমান টাও কম পাই। এভাবে না পারছি খেতে না পারছি কাউকে কিছু বলতে। 


অনেকটা আক্ষেপ নিয়েই কথা গুলো বলছিলেন নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার নবদ্বীপ ছাত্রাবাসের মোবাশ্বের আল হাসান মেহেদী। তার মত একি অভিযোগ পৌরশহরের অন্যান্য মেস ও ছাত্রাবাসে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের। 


কারন নিত্যপন্য ও দ্রব্য মুল্যের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির ফলে মেসের খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে গরু-মুরগির মাংসসহ অনেক পুষ্টিমান খাবার। এতে স্বাস্থ্য ঝুকিতে আছে হাজারো শিক্ষার্থী। 


সরজমিনে গিয়ে বেশ কয়েকটি ছাত্রাবাসে খোজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে  মেসের চুলায় রান্না হয়না গরুর মাংস। আমিষের চাহিদা মেটাতে মেস গুলোতে নিয়মিত বয়লার মাংস খাওয়া হলেও সেটাও এখন মাসে ২ - ৩ বার খাইতে হয়।


বর্তমানে বাধ্য হয়েই অনেক মেসে দুপুরে ডিম সবজি ও রাতে শুধু সবজি খেয়ে কোন রকম টিকে থাকলেও দাম বৃদ্ধির ফলে ডিম খাওয়াও স্বপ্নের মত হতে পারে আশঙ্কা করছে ছাত্র-ছাত্রীরা৷ এমন অবস্থা চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের আমিষের পাশাপাশি পুষ্টি অভাব হতে পারে  বলে ধারণা স্বাস্থ্য সচেতনদের।


ডালিয়া রোডের ময়না ছাত্রী নিবাসের ছাত্রী শাহানাজ জানান, ৪ মাস আগে গরুর মাংস খেয়েছিলেন মেসে এমন আক্ষেপ জানিয়ে তিনি বলেন, আগে আমাদের মিল ছিল ২০-২৫ টাকা। সপ্তাহে ২-৩ দিন গরুর মাংস খেতাম৷ মুরগি তো প্রতিদিনই থাকত।ইদানিং বাজারের মুল্য উর্ধ্বগতির কারনে গরুর মাংস তো আমাদের স্বপ্ন। বর্তমানে মুরগির মাংস খাওয়া তো অসম্ভব। নিত্য দিন ডিম খাইতে হচ্ছে। তাও পুরো ডিম পাইনা অর্ধেক খাইতে হয়। দিধায় আছি ডিমের দাম বাড়বে কিনা।


আরেক ছাত্র মোস্তাকিম ইসলাম বলেন,  ভাই সত্যি বলতে প্রতিদিন মাংস মাছ খাইতাম, এখন খাইতে পাইনা। গরু তো কিনতে যাওয়ার সাহসে নেই, মুরগিও তো এখন বিলাসিতা, মাছ কিনলেও ছোট ছোট পিচ করে নিতে হয়। ডিম অর্ধেক খাইতে হয়। একজন সাইন্সের শিক্ষার্থী হয়ে অন্তত এটা বুঝতে পাই যে আমাদের পুষ্টির যে চাহিদা তা পুরন হচ্ছেনা। সবজিও অল্প করে পাই এখন।


কলেজ পাড়া এলাকার রাফিয়া ছাত্রীনিবাসের কৃষ্ণা রায় বলেন, আমাদের এখানে প্রতিদিন মুরগি কিনতাম বাজারে। এখন আর হয়না। তেল কম কিনতে হয়, মসল্লা কম কিনতে হয়। অল্প তেল অল্প মসল্লা দিয়ে রান্না করে খাইতে হয়। মুরগিও তো খাওয়া হয়না এখন। এক বেলা ডিম খাচ্চি ১৫ দিন ধরে৷ আরেক বেলা সবজি দিয়ে। সকালে তো ডাল ভর্তা নিত্যদিনের সঙ্গী। 

জলঢাকা হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ মেজবাহুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আমিষ জাতীয় খাবার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা দেহের বৃদ্ধি সাধন করে।কখনো কখনো এটা অক্সিজেনের ধারক এবং বাহক হিসেবে কাজ করে। আমিষের ফলে দেহে এমন এনজাইম সরবরাহ হয় যা ডিএনএ এবং আরএনএ উৎপন্ন হয়। আমিষের এর গাঠনিক উপাদান গুলো মানুষের দেহে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে এবং নানা রকম বিক্রিয়া সম্পাদন করে। দেহের প্রতিরক্ষায় আমিষ বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এটা শক্তির উৎস হিসেবে। এজন্য শিক্ষার্থীদের আমিষ জাতীয় খাবার খাওয়া আবশ্যক। 

তিনি আরও বলেন, এখানে মনিটরিং করে অন্য খাবারের মাধ্যমে, যেমন ডিম, উচ্চ পুষ্টি সমৃদ্ধ সবজি, কলাসহ এ ধরনের খাবার দিয়ে তাদের নিয়মিত পুষ্টিমান টা ঠিক রাখা প্রয়োজন। তবে বর্তমানে প্রোটিনের যে সংকট এটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে। এমন চলতে থাকলে শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ ও বেড়ে যেতে পারে।

Post a Comment

0 Comments