বিজ্ঞাপন দিন

বাঁশের সেতুতে বাধা অভ্যন্তরীন যোগাযোগ

জল ডেস্ক : যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামাঞ্চলে ১৩ হাজার ছোট সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে প্রতিটি সেতুর নির্মাণকাজ আগামী তিন বছরের মধ্যে শেষ করবে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর। এ জন্য মঙ্গলবার (১মার্চ) জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে তিন হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে এই অর্থ জোগান দেওয়া হবে। শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতিত্ব করেন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। কুড়িগ্রামের অবহেলিত রৌমারীবাসি সরকারের ওই সিদ্ধান্তের বুকভরা স্বপ্ন দেখছে। কেননা রৌমারীর অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই নাজুক। স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হায়েনাদের কলুষিত পা যে উপজেলার মাটিকে স্পর্শ করতে পারেনি সেই রৌমারী উপজেলায় স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। বিশেষ করে উপজেলার অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো নয়। বর্তমানে অভ্যন্তরীন যোগাযোগ ব্যবস্থায় বাধা হয়ে দেখা দিয়েছে বাঁশের সেতু। উপজেলা শহর থেকে ইউনিয়ন ও গ্রামে স্বাধীনতার দীর্ঘ সময়েও গড়ে ওঠেনি সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তাঞ্চল পশ্চাদপদ এ উপজেলার সার্বিক উন্নয়ন আটকে আছে যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর। এমন তথ্য জানিয়েছেন এলাকাবাসি। অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগের চরম দুরাবস্থার কারনে জনসাধারনকে চরম দুর্ভোগের শিকারই হতে হচ্ছে না, দেশের উন্নয়নের মূলশ্রোতধারা থেকে পিছিয়ে পড়ছে। মুক্তাঞ্চল এ উপজেলার উন্নয়ন থেমে আছে উপজেলার প্রায় অর্ধশত বাঁশের সেতুতে। অভিযোগ আছে, প্রতি বছরে বার্ষিক উন্নয়ন খাত, টিআর (গ্রামীন অবকাঠামো উন্নয়ন) ও কাবিখা (কাজের বিনিময় খাদ্য) কর্মসূচীর আওতায় লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেলেও কোনো পরিবর্তন ঘটেনি যোগাযোগ ব্যবস্থায়। গ্রামীন অবকাঠামো ও রক্ষানাবেক্ষন উন্নয়ন খাতের বিপরীতে বরাদ্দকৃত টাকা সরকারি দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রকল্প চেয়ারম্যানরা নামে মাত্র কাজ করে সমুদয় টাকা আত্মসাৎ করে থাকে। ফলে অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটে না এ উপজেলার। সরেজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) ও ইউনিয়ন পরিষদের অধিনে বিভিন্ন সড়ককের ব্রিজকালভার্ট ও রাস্তাঘাট বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। কিন্তু আবার বন্যা আসার আগে তা সংস্কার না করায় সেই ক্ষতস্থান বড় হতে হতে গর্তের সৃষ্টি হয়। ফলে ক্ষতস্থানে বৃষ্টির পানি জমে থাকে। আবার কোথাও বন্যায় ধসে যাওয়া ব্রিজ কালভার্টের সাথে সংযোগ সড়ক না থাকায় এলাকাবাসি নিজেদের প্রয়োজনে নিজেরাই বাঁশের সেতু নিমার্ণ করে যোগাযোগ রক্ষা করছে। এলজিইডি ও ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য মতে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ও ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন সড়ক ও রাস্তায় অর্ধশত স্থানে ভাঙ্গা রয়েছে। যেখানে বন্যার সময় পানি জমে থাকে। তখন নৌকা ছাড়া কোনো চলাচলের উপায় থাকে না। এসব জায়গায় অর্ধশত বাঁশের সেতু রয়েছে। যে গুলোর সিংহভাগই গ্রামবাসি নিজ উদ্যোগে নিমার্ণ করেছে। বাঁশের নড়বড়ে সেতুর স্থানে পাকা ব্রিজ কালভার্ট না থাকায় সাধরণ মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্যরা প্রত্যন্ত গ্রামে সময় মতো যেতে না পারায় সীমান্তের দুর্গম এলাকা গুলোতে চোরাচালানীদের শক্ত নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা যাতায়াতে অসুবিধার জন্য দুর্গম এলাকার স্কুল গুলোতে পরিদর্শন করেন না। পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা কাদা-পানিতে ভিজে আসামী গ্রেফতার ও সীমান্ত এলাকা নিরাপত্তা দিয়ে থাকেন। বর্ষা মৌসুমে সাধারন মানুষের মতো পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভঙ্গুর থাকার কারনে এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটছে না। প্রত্যন্ত এলাকার কৃষক তার ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় না। উপজেলা শহরে স্বাস্থ কমপ্লেক্স থাকলে এর সুফল পায় না সাধারণ মানুষ। যোগাযোগের অভাবে সময় মতো হাসপাতালে আনতে না পেরে অনেকের মৃত্যু বরন করতে হয়েছে। রৌমারীর উন্নয়ন প্রক্রিয়া সেল’র সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ মোমদেল হক বলেন, সারা দেশের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হচ্ছে। উপজেলার অভ্যন্তরীন সড়ক যোগাযোগ সংস্কার ও নিমার্ণে প্রশাসন কার্যকরী কোনো উদ্যোগও নিচ্ছে না।