বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারীতে বন্ধ হয়নি নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার

সুমন মূখাজী নীলফামারী প্রতিনিধিঃ নীলফামারীর বিভিন্ন হাট বাজারে দিন দিন বেরেই চলেছে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যবহার। কোন কিছুতেই থামছে এই নিষিদ্ধ পলিথিন উৎপাদন ও ব্যবহার । এতে করে মারাত্মক ঝুঁকিতে এখন জীব বৈচিত্র্য। নীলফামারী সদরে বিভিন্ন দোকানে দেখা গেছে এসব পলিথিনের ব্যবহার।

নীলফামারী জেলার ৬ উপজেলা শহরসহ জেলার ৪ শতাধিক ছোট বড় হাট বাজারে হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত হচ্ছে পলিথিন। ফলে নষ্ট হচ্ছে মাটির উর্বরতা ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা। দূষিত হচ্ছে বিশুদ্ধ বায়ু প্রবাহ। সেই সাথে ছড়াচ্ছে জীবন ঘাটা বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু। নীলফামারী জেলায় সৈয়দপুর উপজেলার শহরে প্রায় ডজন খানেক পলিথিনের কারখানা এখনও সরকারি নিয়ম নীতি না মেনে নিজেদের খেয়াল খুশিমত চালিয়ে যাচ্ছে পলিথিনের উৎপাদন। এর চাহিদায় টান পড়ায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওইসব অসাধু উৎপাদন ব্যবসায়ী দিনে দিনে আঙ্গুল ফলে কলা গাছ হচ্ছে। সরেজমিনে সোমবার নীলফামারীর সৈয়দপুরে দেখা গেছে এই সব পলিথিন কারখানা । কলেজের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রভাষক মো. মহিদুল ইসলাম  বলেন, পরিবেশ দুষণকারী পলিথিন বন্ধে সরকারের উদ্যোগ প্রশংসনীয়। কিন্তু বাস্তবে এর ব্যবহার বন্ধ না হলে জনস্বাস্থ্য মারত্মক ঝুঁকিতে পারবে। তিনি আরো বলেন, এখনই এর ব্যবহার বন্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। সেই সাথে প্রয়োজন সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি।তবেই বাঁচবে পরিবেশ, বাঁচবে জীব-বৈচিত্র্য। সূত্রমতে, ১৯৮২ সালে বাংলাদেশে প্রথম পলিথিনের বাজারজাত ও ব্যবহার শুর্ব হয়। সহজ পরিবহন ও স্বল্পমূল্যের কারণে পলিথিন দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। কিন্তু ক্রমান্বয়ে পলিথিনের ব্যাপক ব্যবহার এবং যেখানে সেখানে পলিথিন ফেলে দেয়ার কারণে তা পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনে।বিশেষ করে ড্রেন, ডোবা, পুকুর, নালা, খালসহ বিভিন্ন জলাশয়ে পলিথিন জমা হবার ফলে ওইসব স্থানে জলের স্বাভাবিক প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে মশা-মাছির প্রজনন বৃদ্ধিসহ পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়। ক্রমাগতভাবে পলিথিনের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ায় সরকার ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাত, ক্রয়-বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুদ ও বিতরণ নিষিদ্ধ করে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক এবং দু:খজনক হলেও সত্য যে, নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার একযুগ পরে আবারও পলিথিনের অবাধ ব্যবহার শুরু হয়েছে। তথ্যমতে, সরকার ২০১০ সালে পলিথিনের পরিবর্তে পাটজাত ব্যাগ ব্যবহারের আইন পাশ করে। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, পলিথিনের স্তর নদীর তলদেশের পলি আটকিয়ে শুধু নদীর নাব্যতাই নষ্ট করছে না, বরং মাছ ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে পানিতে স্বাভাবিক অক্সিজেনের পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস করছে। পলিথিন ব্যাগ জমির উৎপাদন ক্ষমতা কমিয়ে দিচ্ছে। ঢাকা শহরের পয়ঃনিষ্কাশনের ৮০ ভাগ ড্রেন পলিথিন ব্যাগ দ্বারা জমাট বেঁধে আছে। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরে দেখা দেয় অসহনীয় জলাবদ্ধতা। ড্রেনেজ সিস্টেমকে সর্বদাই অচল করে রাখে। তিনি আরও জানান, ২০০২ সালে নিষিদ্ধ হওয়ার পর জোরালো অভিযান এবং আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিনের ব্যবহার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পার হয়ে যায়, কিন্তু আইন ভঙ্গ করে যারা পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহার করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত তেমন কোনো প্রক্রিয়া দেখা যাচ্ছে না। যথাযথ নজরদারি না থাকায় আবার সেই আগের মতোই পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন ব্যাগ উৎপাদনকারী ও বিপণনকারী শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার আর্থিক লেনদেনের কারণে দীর্ঘ ১০ বছরের বেশি সময় যাবৎ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার স্বার্থে পলিথিন উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের বিরুদ্ধে উল্লেখযোগ্যভাবে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। আবু নাসের খান বলেন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (২০০২ সনের ৯ নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ৬ক ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার সকল বা যে কোন প্রকার পলিথিন শপিং ব্যাগ, বা পলিইথাইলিন বা পলিপ্রপাইলিনের তৈরি অন্য কোন সামগ্রী পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হলে, এরূপ সামগ্রীর উৎপাদন, আমদানি, বাজারজাতকরণ, বিক্রয়, বিক্রয়ের জন্য প্রদর্শন, মজুদ, বিতরণ, বাণিজিক উদ্দেশ্যে পরিবহন বা বাণিজিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে। পণ্যে পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক ব্যবহার আইন, ২০১০ (২০১০ সনের ৫৩ নং আইন) (২০১৩ সনের ৩৮ নং আইন দ্বারা সংশোধিত) এর ধারা-৪ পণ্য সামগ্রীতে পাটজাত মোড়ক ব্যবহার: কোন ব্যক্তি বিধি দ্বারা নির্ধারিত পণ্য, পাটজাত মোড়ক দ্বারা মোড়কজাতকরণ ব্যতিত, বিক্রয়, বিতরণ বা সরবরাহ করতে পারবে না। জানা গেছে, পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতিকর দিক বিবেচনা করে রপ্তানিমুখী শিল্প ব্যতীত বাংলাদেশে সব ধরনের পলিথিন ব্যাগ উৎপাদনকারী শিল্পের উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল ২০০২ সালে। ওই বছর ১ জানুয়ারি ঢাকায় এবং ১ মার্চ সারাদেশে পরিবেশ রক্ষায় পলিথিনের তৈরি ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত)-২০০২ অনুযায়ী, এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের সশ্রম কারাদ- এবং ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধান রয়েছে। আর বাজারজাত করলে ৬ মাসের জেল এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। কিন্তু বর্তমানে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার করা হলেও এই আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) মোহাম্মদ মুনীর চৌধুরী বলেন, আইনের কঠোর প্রয়োগের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ ধ্বংসের বেপরোয়া প্রবণতা বন্ধ করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এতে শিল্পোদ্যোক্তাসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে পরিবেশ আইন মেনে চলার সংস্কৃতি সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তর ইতোমধ্যে দেশব্যাপী পলিথিনের উৎপাদন ও বিক্রয় বন্ধ করার জন্য সব পর্যায়ে জোর তৎপরতা এবং সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করছে। পরিবেশ অধিদপ্তর গত তিন বছরে নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ২৩৩ টন পলিথিন জব্দ এবং এক কোটি ৮৭ লাখ ১৬ হাজার টাকা জরিমানা