বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারীতে ভোটের উৎসবে বৃষ্টি উপেক্ষিত

সুমন মূখাজী নীলফামারী প্রতিনিধিঃ ভোটগ্রহণ শুরুর আগে থেকেই নারী-পুরুষ ভোটাররা কেন্দ্রে এসে লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েন। ঘড়ির কাটা সকাল ৮টায় পৌঁছামাত্র অমনি ভোট প্রদানের উৎসব শুরু হয়ে যায়। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভোটাররা একে একে ভোটকে প্রবেশ করে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট প্রদান করতে থাকেন। তবে ভোটকেন্দ্রে নারীদের লাইন ছিল চোখে পড়ার মতো। কেন্দ্রের প্রত্যেক বুথের সামনে পুরুষ ভোটারদের চেয়ে নারী ভোটারদের লাইন ছিল অনেক লম্বা। চতুর্থ দফায় আজ শনিবার (৭ মে) ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ চলাকালে নীলফামারীর দুই উপজেলা ডোমার ও কিশোরীগঞ্জের ১৯ ইউনিয়নের ১৭২টি ভোট কেন্দ্রের এমন চিত্র ছিল। মিস্টি রোদ ও ফুরফুরে বাতাসে ভোটাররাও ছিল খোঁশ মেজাজে । তবে হঠাৎ করে মেঘের গর্জন আর মুষলধারে বৃষ্টি নামলে কিশোরীগঞ্জ ও ডোমার উপজেলায় ভোট গ্রহনে কিছুটা ব্যাঘাত সৃস্টি হয়। ভোটাররা আশ্রয় নেয় কেন্দ্রের বারান্দায় বা শ্রেনী কক্ষে। ওই অবস্থায় ভোটারদের ভোট কক্ষে প্রবেশ করে ভোট প্রদান করতে দেখা যায়। তবে ঝামেলাবিহীন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট সম্পন্ন হয়। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা গ্রহন চলে ডোমার উপজেলার ডোমার, সোনারায়, হরিণচড়া, বোড়াগাড়ি, জোড়াবাড়ি, পাঙ্গামটুকপুর, বামুনিয়া, গোমনাতি, কেতকিবাড়ি ও ভোগডাবুরী এবং  কিশোরীগঞ্জ উপজেলার, কিশোরীগঞ্জ, নিতাই, বাহাগিলি, গাড়াগ্রাম, বড়ভিটা, পুটিমারী, চাঁদখানা, রণচন্ডি ও মাগুড়া ইউনিয়নে। এদিকে সকাল ১০টায় কিশোরীগঞ্জ দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে বৃষ্টির মাঝে নারীদের বারান্দায় লাইনে দাড়িয়ে ভোট দিতে দেখা গেছে। কিশোরীগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলি ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়াডের উত্তরদুরাকুটি ময়দানপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দুপুর একটায় গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের বৃস্টিতে ভিজে ভোট দিতে। ভোটারদের সাখে কথা বলেন তারা জানান, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ন পরিবেশে আমরা নিজের ভোট প্রদান করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। এখানে কঠোর নিরাপত্তায় কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই নির্বাচন অনুষ্ঠিত দেখে অন্যান্য ভোটাররাও বেজায় খুশী। সকালে পুরুষদের বুথ গুলো ছিল ফাকা। অন্যদিকে, নারীদের বুথে ছিল উপচেপড়া ভিড়। তাঁরা দুপুরের আগেই দল বেঁধে ভোট দিতে এসেছিল। সকালে নারীদের উপস্থিতির ব্যাপারে মতামত জানতে জাহেরা বেগম (৫০) বলেন, তাড়াতাড়ি ভোট দিয়ে বাড়িতে গিয়ে রান্না করব। বাড়ির লোক ফসলের মাঠে কাজকর্মে গেছে। দুপুরের ভাত খেয়ে তারা ভোট দিতে আসবে। এ জন্যই সকাল সকাল এসেছেন। দুপুর দুইটার পর আবার পুরুষদের বুথে ভিড় জমতে শুরু করে। তখন নারীদের বুথ ছিল একেবারেই ফাঁকা। ভোটার ইউনুস মন্ডল (৪০) বলেন, এখন বোরো কাটাইমাড়াই শুরু হয়েছে মাঠ ছেড়ে থাকার উপায় নেই। ডোমারের সোনারায় ইউনিয়নের টংবান্ধা গ্রামের ১০৫ বছরের বৃদ্ধা কেরামত আলীকে পশ্চিম সোনারায় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্ত্রে এসে ভোট দিতে দেখা যায়। বৃস্টির আগে বোড়াগাড়ী ইউনিয়নের কাজী নজরুল ইসলাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে দেখা যায় নারী ভোটারদের উপচে পড়া ভিড়। ডোমার উপজেলার হরিণচড়া ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী ওসমান গণি বলেন, ভোট সুষ্ঠুভাবে হয়েছে, ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোট প্রদান করেছে। বামুনিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থী  মনোরঞ্জণ রায় ও আ. লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী মো. ওয়াহেদুজ্জামান দুইজনই বলেন, ভোট সুষ্টু ভাবে হয়েছে। এ নিয়ে আমাদের কারও কোনো অভিযোগ নেই। তবে সকাল আটটা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ঝামেলাবিহীন কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয় ডোমার উপজেলার ডোমার, সোনারায়, হরিণচড়া, বোড়াগাড়ি, জোড়াবাড়ি, পাঙ্গামটুকপুর, বামুনিয়া, গোমনাতি, কেতকিবাড়ি ও ভোগডাবুরী এবং  কিশোরীগঞ্জ উপজেলার, কিশোরীগঞ্জ, নিতাই, বাহাগিলি, গাড়াগ্রাম, বড়ভিটা, পুটিমারী, চাঁদখানা, রণচন্ডি ও মাগুড়া ইউনিয়নে। এদিকে বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র ঘুরে দেখেন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক জাকীর হোসেন ও পুলিশ সুপার জাকির হোসেন খাঁন। তারা বলেন প্রথম তিন দফার নির্বাচনে নীলফামারীর কোথাও কোনো সহিংস ঘটনা যেমন ঘটেনি, তেমনি চতুর্থ দফার নির্বাচনেও কিছু ঘটেনি। বৃস্টি উপেক্ষা করে ভোটাররা ভোট উৎসব পালন করেছে। এদিকে ভোটগ্রহন শেষে বিকাল চারটার পর ভোটগননা শুরু হয়। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জিলহাজ উদ্দিন বলেন, ডোমার ও কিশোরীগঞ্জ উপজেলার ১৯টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে ১১৮ জন ও সাধারণ সদস্য পদে ৬৯২ জন এবং সংরক্ষিত নারী ওয়ার্ড সদস্য পদে ২৩৩ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। প্রথম তিন দফার নির্বাচনে নীলফামারীর কোথাও কোনো সহিংসতার ঘটনা না ঘটায় চতুর্থ দফার নির্বাচনেও এলাকার ভোটারদের মাঝে আরো বেশি উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা দেয়।