বিজ্ঞাপন দিন

“ভুয়া কাজীদের দৌরাত্ম্যে ” জলঢাকায় কিছুতেই ঠেকানো যাচ্ছে না বাল্যবিয়ে!

শাহজাহান কবির লেলিন, প্রতিনিধি জলঢাকা, নিলফামারী : মহিমা আক্তার তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী বাড়ি নীলফামারী জলঢাকার পূর্ব গোলমুন্ডা ইউনিয়নের ঘোড়ামারায় পিতা সামছুল হক একজন কৃষক, সম্প্রতি মহিমার বিয়ে দিয়েছেন তিনি। একই এলাকার মোজা মামুদের কন্যা গোলমুন্ডা ফাজিল মাদ্রাসার ৬ষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্রী ৯ নং ওয়ার্ড বানিয়া পাড়া ঘাটের পাড় এলাকায় সদ্য তার বিয়ে হয়েছে। আফরোজা আক্তার জয়া পিতা আকবর হোসেন ৭ম শ্রেণীর ছাত্রী তার বিয়ে হয়েছে কিশোরগঞ্জ অবিলার বাজারের ভবলা গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে মমিনুলের সাথে। হলদিবাড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী সাইফুল ইসলামের মেয়ে রুনা এরও বিয়ে হয়েছে। একই স্কুলের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী আব্দুল করিমের মেয়ে কারিমা আক্তার এবং গোলমুন্ডা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী রশিদুল ইসলামের মেয়ে লিমা আক্তার (হেনা) এদেরও বিয়ে হয়েছে শিশু বিবাহ। 

শুধু এরাই নয়, এরকম বিয়ে হয়েছে হলদিবাড়ি শিমুলতলা ফজলুল হকের কন্যা বিউটি আক্তারের পাশ্ববর্তী কাঁঠালী ইউনিয়নের বিন্যাবাড়ি গ্রামের তবিবর মেম্বারের ছেলের সঙ্গে। পূর্ব গোলমুন্ডা ঘোড়ামারা সাইদ আলীর কন্যা ছাদেকা এরও বিয়ে হয়েছে সম্প্রতি। ৪ নভেম্বর গোলমুন্ডা কাঁকড়া বাজার এলাকার সামছুল ইসলামের কন্যা শাহিনা বেগমের বিয়ে হয় ডিমলা ঝুঁনাগাছ চাঁপানী চৌধুরী পাড়া রশিদুল ইসলামের ছেলে আসাদুল ইসলাম এর সাথে। এ চিত্র! শুধু জলঢাকার একটি ইউনিয়ন গোলমুন্ডার। এরকম পৌরসভা সহ ১০ টি ইউনিয়নের একই অবস্থা। উপজেলা প্রশাসন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে স্থানীয় স্টেডিয়াম মাঠে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের উপস্থিতিতে ২০১৪ সালের ৩১ মার্চ জলঢাকাকে বাল্যবিবাহ মুক্ত ঘোষণা করলেও বাস্তবে এর চিত্রটি ভিন্ন! প্রশাসন বাল্যবিবাহ সম্পর্কে অবহিত হলেও শুধু ফোনে-ফোনে আলাপচারিতায় শেষ হয়। 

এ বিষয়ে প্রতিবেদক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবগত করলে তাৎক্ষনিক উপজেলা সা-রেজিষ্টারকে ভুয়া কাজীদের নোটিশ করতে বলেন। সাব-রেজিষ্টার সংবাদকর্মীকে জানান, “আমি দুজনকে মৌখিক ভাবে আমার দপ্তরে আসতে বলেছি, কিন্তু তারা কোন সারা দেয়নি আমাকে। আসলে এ বিষয়টি দেখভাল করেন জেলা রেজিষ্ট্রার। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুষ্ঠু নজরদারী, আইনানুক প্রয়োগ, অসচেনতা, দারিদ্রতা ও নিরক্ষতার কারণে এ শিশু বিবাহ কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না। উপরোন্ত হিড়িক লেগেছে ভুয়া কাজীদের। আর, এসব কাজীদের কবলে পড়ছেন তারাই যারা অল্প বয়সে মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছেন। এক একটি ইউনিয়নে একটি কাজীর কথা পরিপত্রে উল্লেখ থাকলেও রয়েছে একাধিক। 

সোমবার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের মোশাররফ কাজী বলেন, এক শ্রেণীর অসাধু পুস্তক বিক্রেতা ভুয়া বিবাহ রেজিষ্ট্রি বই বিক্রি করছে বাজারে আর এসব বই সংগ্রহ করে ভুয়া কাজীরা দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছেন এসব বিয়ে। ফলে মাতৃ মৃত্যুর হার বেড়েই চলছে। স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন অনেকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ব্যক্তি জানিয়েছেন, গোলমুন্ডা ইউনিয়নে শিশু বিবাহে লিপ্ত রয়েছেন, ভুয়া কাজীর তালিকায় মৃত-তমিজ উদ্দিনের ছেলে কাজী আনিছুর রহমান, মৃত-রফিকুল ইসলামের ছেলে হাবিবুর রহমান, ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়নের নিকাহ রেজিষ্ট্রার আব্দুল আজিজ সহ অনেকে । তারা আইনকে বৃর্দ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবাদে চালিয়ে যাচ্ছেন এসব বিয়ে। সরকার একদিকে হারাচ্ছে রাজস্ব, অন্যদিকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানের লক্ষ্য হচ্ছে ভুলণ্ঠিত।