বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারী-৩ আসন জাতীয় পার্টিকে ছাড় দিতে নারাজ আওয়ামীলীগ

আবেদ আলী বিশেষ প্রতিনিধিঃ নির্বাচনী হাওয়া বইছে নীলফামারী -৩ (জলঢাকা) সংসদীয় আসনে । এ আসনটি আওয়ামীলীগের দূর্গ বলে পরিচিত। তবে একাদশ জাতীয় নির্বাচনে ভাগ বসাতে মরিয়া জাতীয়পার্টি। তবে এবার আওয়ামীলীগ কোন অবস্থাতেই ছাড় দিতে চাইছেদ না জাতীয় পার্টিকে আসনটি। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভাকে ঘিরে এ আসন। নির্বাচন কেমন হবে, কোন দল অংশ নেবে, কারা বর্জন করবে এসব বিষয় পরিষ্কার না হলেও সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বর্তমান আওয়ামীলীগের দলীয় এমপি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ছুটে বেড়াচ্ছেন এক ইউনিয়ন থেকে আরেক ইউনিয়ন। বড় সব দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখন নির্বাচনী মাঠে ভোটারদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করতে দেখা যায়। দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। এ আসনটি বর্তমানে আওয়ামীলীগের দখলে। তবে জোটগত নির্বাচন হলে এ আসনটি দাবি করছেন জাতীয় পার্টি। একাধিক জাতীয় পার্টি নেতাদের মুখে শুনা যায়। নীলফামারী -৩ (জলঢাকা ) ১৯৯০ সালের পর থেকে এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাত্র একবার জয়লাভ করে।

অপরদিকে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ দুইবার এ আসনটিতে এমপি নির্বাচিত হয়। বাকী সময়টা জামায়েতের কবজায় ছিল। তাই এবার আওয়ামী লীগ এ আসনটি আর জাপাকে ছাড় দিতে রাজি নয়। বিএনপি-জামায়াতও তাদের নিজস্ব প্রার্থীর পক্ষে নানাভাবে প্রচার শুরু করেছে। জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা স্থানীয় হলেও কর্মক্ষেত্রে ঢাকায় বসবাস করায় এখানে তারা বহিরাগত প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত। দুজন জাতীয় পার্টির প্রার্থী ঢাকায় ও অপর একজন কক্সবাজারে অবস্থান করায় বিবেচনার দিক দিয়ে জন সমর্থনে এগিয়ে আছেন বর্তমান এমপি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জলঢাকা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা। অন্যদিকে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে জাপা প্রার্থী হিসাবে কাজী ফারুক কাদের, মেজর (অবসর প্রাপ্ত) রানা মোহাম্মদ সোহেল ও ডাঃ বাদশা আলমগীর এই আসনে মনোনয়ন চান। নীলফামারী-৩ এ আসনে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সঙ্গে ভোটের মুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জামায়াতের সঙ্গে। বরাবরেই ভোটের বিবেচনায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী সব সময় আসনে ১ম অবস্থানে থাকে। তবে দলীয় মতভেদের কারনে আসনটি আওয়ামীলীগ থেকে হাতছাড়া হয়েছে কয়েকবার। তাই এবার জোরে শোরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠে নেমেছেন। জোটবদ্ধ নির্বাচন হলে এবারও এ আসন ছেড়ে দিতে হতে পারে মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টিকে। ইতিমধ্যে নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনছার আলী মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল ও সাবেক উপজেলা যুবলীগের সভাপতি আব্দুল ওয়াহেদ বাহাদুর। যুবলীগ নেতা এনামুল হক বলেন, গনতন্ত্র ও সরকারের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধী মুক্ত স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়তে উন্নয়নের প্রতীক নৌকার বিকল্প নেই এই আসনে। তবে এ আসনে জামায়াতের ভোট হয়ে উঠতে পারে একটি ফ্যাক্টর। জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যক্ষ আজিজুল ইসলাম জামায়াত থেকে নির্বাচন করবে এটা অনেকটাই নিশ্চিত।

এদিকে দুই বারের উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সৈয়দ আলী স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে ঝিমিয়ে পড়া বিএনপি-জামায়াত জোটের নেতারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢিমেতালে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও পৌর মেয়র ফাহমিদ ফয়সাল চৌধুরী কমেট ও পৌর সভাপতি আহমেদ সাঈদ ডিডু চৌধুরী। পৌর বিএনপির সভাপতি আহমেদ সাঈদ চৌধুরী ডিডু বলেন, আমরা দলকে সুসংগঠিত করতে প্রকাশ্যে সাংগঠনিক কার্য্যক্রম সেভাবে পরিচালনা করতে না পারলেও ঘরোয়া আলোচনার মাধ্যদিয়ে পৌরসভার পাশাপাশি পুরো উপজেলার ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড কমিটির সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। গত পৌরসভার নির্বাচনে এখানে বিশাল ভোটের ব্যবধানে ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র নির্বাচিত হয়েছে। এবার এই সংসদীয় আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আসনটি বেগম খালেদা জিয়াকে বিজয় উপহার দিবো ইনশাল্লাহ্। এদিকে জাসদ (ইনু) ১৪ দলের প্রাথী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা জাসদের সভাপতি অধ্যাপক আজিজুল ইসলাম ও উপজেলা জাসদ সভাপতি গোলাম পাশা এলিচ। অন্যদিকে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩শত আসনে প্রার্থী ঘোসনা করেছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। সেই অনুযায়ী এ আসনে প্রার্থী জলঢাকা উপজেলা শাখার সভাপতি আমজাদ হোসেন সরকার। তার দলের প্রতীক হাতপাখা মার্কার জনসমর্থন চেয়ে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন।

আমজাদ হোসেন সরকার বলেন আমরা ধর্মের নামে কোন রাজনীতি করিনা। দেশে প্রচলিত গনতন্ত্র মানুষ দ্বারা রচিত। তাই এই গনতন্ত্রের অধীনে দেশে কোন শান্তি আসতে পারেনা। একমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই শান্তি আসতে পারে। মুসলিম প্রধান এই দেশে সঠিক ইসলাম প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনের মাধ্যমে জনসমর্থন প্রয়োজন। তাই আশা করি ইসলাম অনুসারীরা এ নির্বাচনে আমাদের সমর্থন দিবেন। জলঢাকার এ আসনটি যাতে কোনো ভাবেই জাতীয় পার্টিকে না দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে আওয়ামীলীগের তৃনমুল নেতাকর্মীরা জোড় দাবী রাখছেন দলের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার কাছে। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেলওয়ার হোসেন ও জাতীয় শ্রমিকলীগ সভাপতি জসির উদ্দিন মনে করেন জাতীয় পার্টি এমপি এ আসনে নির্বাচিত হয়েছিল। সে সময় দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশে আমরা সবাই ভোটও দিয়েছিলাম জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে। কিন্তু জলঢাকা আ.লীগ নেতাকর্মীরা ছিল অবহেলিত। এলাকার উন্নয়নে তার ছিলনা কোন ভুমিকা। সেসময় একটি ডিও লেটার সংগ্রহ করতে হয়েছে ঢাকায় গিয়ে। কারণ জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছিল বহিরাগত। অতিথি পাখি প্রার্থী দিয়ে এলাকায় উন্নয়ন সম্ভব নয়। তারা আরো বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে দলীয় এমপি দৃশ্যমান অনেক উন্নয়ন করেছেন। নেতাকর্মীরা মুল্যায়ন পেয়েছে। তাই যুক্তি সংগত কারনেই এ আসনে আ.লীগ প্রার্থীর মনোনয়ন চাই আমরা। উপজেলা যুবলীগ আহবায়ক সারোয়ার হোসেন সাদের “বলেন গত ১৪ সালের ৫ জানুয়ারী দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় পর প্রান ফিরে পেয়েছে এ আসনের তৃনমুল নেতাকর্মীর।। বর্তমান এমপি যে উন্নয়ন এলাকায় করেছেন তা ৪৭বছরেরও হয়নি।

তিনি আরও বলেন জামায়াত অধ্যষিত এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রার্থী দিয়ে সরকারের চলমান উন্নয়নের এজেন্ডা বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। যুবলীগ নেতা সাদের বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে যাতে করে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিরোধীতাকারীদের সন্তানদের কোন ভাবেই যাতে এ আসনে মনোনয়ন দেওয়া না হয় সেদিকে সজাগ থাকার আহবান জানান যুবলীগ নেতাকর্মীদের। এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক সহীদ হোসেন রুবেল বলেন, দলীয় মনোনয়ন আমিও চাই। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পুনরায় ক্ষমতায় আনতে আমাদের যে কোন ত্যাগ স্বীকার করে নিতে হবে। এ বিষয়ে উপজেলা জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য ও উপজেলার সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইদার রহমান বুলু জানান, এ আসনে জাতীয় পার্টি এখন সু সংগঠিত। তাই লাঙ্গল প্রতীক মনোনয়ন দেওয়া হলে বিপুল ভোটে বিজয় হবে।