বিজ্ঞাপন দিন

“তিস্তা ব্যারেজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের” উদ্যোগে সেচ কার্যক্রম উদ্বোধন

জল ডেস্ক: ২৭ জানুয়ারী রবি ও খরিপ-১ মৌসুমের তিস্তা ব্যারাজের সেচ কার্যক্রম অংশ হিসেবে এস১টি সেচ খালে “তিস্তা ব্যারেজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের” উদ্দোগে সেচ কাযক্রম উদ্বোধন করা হয়। চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে দেশের সর্ববৃহৎ তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্প প্রথম সেকেন্ডারি খালে সেচ কার্যক্রম শুরু করা হলো। আগামী ১৫ জানুয়ারী সেচ প্রকল্পটির কমান্ড এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে “নাপাউবো ও তিস্তা ব্যারেজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের” যৌথ উদ্দোগে সেচ কার্যক্রমের উদ্ধোধন করা হয়। তিন জেলা নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুরে ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদান প্রদানে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এ জন্য সকল প্রস্তুতি গ্রহন করেছে সংশ্লিষ্টরা। তিস্তা নদী উত্তরের জীবনরেখা।তিস্তা তার জলদুগ্ধে উত্তরের জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। কখনো প্রত্যক্ষভাবে, কখনো পরোক্ষভাবে। উত্তরের জনপদে তিস্তা অববাহিকার মানুষ তাই তিস্তার কাছে ঋণী। সেচ নির্ভন বোরো আবাদে তিস্তার পানির ব্যাপক চাহিদা। আর অন্যদিকে উজানের পানি প্রবাহের উপর উত্তরাঞ্চলের হাজার হাজার কৃষকের ভাগ্য সেচের উপর নির্ভরশীল। বর্তমানে উজানের জোয়ারে তিস্তা পানি প্রবাহ রয়েছে পাঁচ হাজার কিউসেক। সরেজমিনে গেলে নদী অববাহিকার জেলে ও নৌকা মাঝিরা বলছে নদীতে ভালই পানি আসছে। শুস্ক মৌসুমে উজান হতে পানি প্রাপ্তিতায় নদীজুড়ে চলছে স্রোতধারা। চলছে নৌকা, জেলেরা ধরছে মাছ। গত এক পক্ষকাল হতে নদীতে পানির গড় হিসাব ছিল দেড় হাজার কিউসেক। যা বুধবার(২ জানুয়ারী) হতে বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ হাজার কিউসেক। তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, চলতি রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে তিস্তা ব্যারেজ থেকে আগামী ১৫ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে সেচ প্রদান শুরু করা হয়। সেচে প্রদানের কমান্ড এলাকা তৈরী রয়েছে ৭৯ হাজার হেক্টর। উজানের পানি প্রাপ্তিতার উপর নির্ভর করবে আমরা কতখানী এলাকায় সেচ দিতে পারি। তিনি বলেন এরপরেও চলতি মৌসুমে নীলফামারী,রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ২৯ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলা ৫ হাজার হেক্টর, জলঢাকা উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর ও নীলফামারী জেলা সদরে ৭ হাজার হেক্টর, কিশোরীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার হেক্টর, সৈয়দপুর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর, রংপুর জেলার গঙ্গাচরা উপজেলায় ৩ হাজার হেক্টর ও দিনাজপুর জেলার খানসামা এবং চিরিরবন্দর উপজেলায় ১ হাজার ৫০০ হেক্টর। তিস্তা ব্যারেজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারন সম্পাদক প্রভাষক জিয়াউর রহমান জানান, বর্তমানে নদীতে উজানের পানির যে জোয়ার রয়েছে এই জোয়ার অব্যাহত থাকলে আমরা ৫০ হাজার হেক্টর জমি পর্যন্ত সেচ দিতে সক্ষম হবো। পানি জোয়ার আরো বৃদ্ধি পেলে ও সেচ খালগুলোর কার্যকর সংস্কার হলে কমান্ড এলাকার ৭৯ হাজার হেক্টর জমি সেচ পেয়েও যেতে পারে। সুত্র মতে তিস্তায় যখন পূর্ণমাত্রায় পানি আসত তখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হতো। সাধারণভাবে ধান চাষ করলে যে ব্যয় হয়, সেচ প্রকল্পের সুবিধা নিয়ে সেই ধান চাষ করলে ব্যয় হয় ২০ ভাগের ১ ভাগ। এ ছাড়া ধানের ফলনও হয় বাম্পার। বৃহত্তর রংপুরের মঙ্গা দূরীকরণে তিস্তা সেচ প্রকল্প অনন্য ভূমিকা পালন করেছে। উত্তরের জীবনের জন্য তিস্তার পানির কোনো বিকল্প নেই। বিগত বছরের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৪ সালে সেচ নির্ভর রবি ও খরিপ-১ মৌসুমে নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলায় ৬৫ হাজার ৫শত হেক্টর জমিতে সেচ প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, কিন্তু সেখানে তিস্তা নদীর পানি অভাবে সেচ প্রদান সম্ভব হয়েছিল মাত্র ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে। ২০১৫ সালে ৩৭ হাজার ৫শত হেক্টর জমি সেচের আওতা থেকে কমিয়ে আনা হয়েছিল ২৮ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে। কিন্তু পানি কম থাকার কারণে সেচ সরররাহ করা হয়েছে ৮ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে। যেহেতু এখনও তিস্তার পানি চুক্তি হয়নি সে ক্ষেত্রে গত বছরের ন্যায় চলতি বছরেও চাহিদা মতো তিস্তা নদীর পানির প্রাপ্তিতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায় । ডালিয়ার জেলে হেকমত আলী (৫০) বললেন, আমরা সৃস্টিকর্তার কাছে প্রতিদিন দোয়া করে মাছ ধরতে তিস্তায় নেমে পড়ি। বর্তমানে নদীতে প্রচুর পানি। এই পানি যেন সারা শুস্ক সময় ধরে থাকে।সেচ সুবিধার কমান্ড এলাকা দেশীবাই গ্রামের কৃষক সহিদুল ইসলাম বলছেন। এবার সেচ ক্যাল গুলো পানিতে ভরে আছে। তিস্তা ব্যারেজ পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশন সক্রিয় থাকায় বাপাউবো অফিসাররা কৃষক বান্ধব হওয়ায় ও ক্যানেলে এমন পানি থাকলে এবার বোরো ধান আবাদ ভালই হবে। কিন্তু এমন পানি আদৌ থাকবে কিনা এমন আশংঙ্কাও করছেন এই কৃষক। ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তায় এবার উজানের জেয়ার ভালই রয়েছে। এই জোয়ার অব্যাহত থাকলে আমরা টার্গেটের বেশী জমিতে সেচ দিতে পারবো।