বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারীতে তিস্তার বুকে নানান ফসল ভূমিহীন কৃষকরাও এখন হচ্ছে স্বাবলম্বী

আবেদ আলী বিশেষ প্রতিনিধিঃ তিস্তাসহ পানিশূন্য নদীগুলোর বুকে ইরি- বোরো সহ চাষাবাদ হচ্ছে নানান জাতের ফসল এতে করে তিস্তাপাড়ের ভূমিহীন কৃষকরাও এখন নদী নালা খালবিলে চাষাবাদ করে হচ্ছেন স্বাবলম্বী। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রমত্তা তিস্তা, বুড়ি তিস্তা, বুল্লাই, ধুমনদী ও আউলিয়া খানাসহ নদীগুলোর ড্রেজিং না করায় নাব্যতা হারিয়ে পানি শুন্য হয়ে পড়েছে। ফলে প্রায় মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে এই নদীগুলোর নাম। এদিকে পানিশুন্য শ্রোতহীন তিস্তাসহ নদীগুলো এখন অস্থিস্ত হারা ধুধু বালু চরে পরিনত হওয়ায় সেখানে ভূমিহীন কৃষকরা ইরি - বোরো, ভূট্টা, গম ও মিষ্টি কুমড়া সহ করছে বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ। তিস্তাসহ নদীসমুহে শুষ্ক মৌসুমে সেচ কাজের জন্য যেখানে ৩ হাজার ৫শত কিউসেক পানি থাকার কথা সেখানে রয়েছে ৩শত কিউসেক পানি। এলাকাবাসী জানায়, তিস্তা ব্যারেজের ৬৫ কিঃমিঃ উজানের হিমালয় থেকে নেমে আসা তিস্তা বাংলাদেশের উত্তোরের জেলা নীলফামারীর ডিমলা উপজেলা হয়ে জলঢাকার উপর দিয়ে মিশে গেছে পার্শ্ববর্তী রংপুর জেলার গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী এলাকায়। রোববার সরেজমিনে তিস্তাসহ উপজেলার বিভিন্ন নদী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তিস্তার পানিশুন্যের কৌটায় নেমে আসায় তিস্তা ব্যারেজের সকল গেট বন্ধ করে বোরো চাষের জন্য পানি দেওয়া হচ্ছে তিস্তা সেচ ক্যানেলে। এর ফলে তিস্তা নদীতে মাইলের পর মাইল জেগেছে বসেছে চর। অথচ এক সময় এ খরশ্রোতা তিস্তাসহ নদীগুলো অনেক ফসলী জমি গ্রাস করেছে। বর্ষা মৌসুমে এসব নদীতে পাওয়া যেতো বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তিস্তার চরসহ বিভিন্ন নদীতে জমি হারা এবং ভূমিহীন কৃষকরা তাদের পরিবার পরিজন নিয়ে পরিশ্রম করে ফলাচ্ছেন নানান জাতের ফসল। জলঢাকা উপজেলার শৌলামারীর চর এলাকার কৃষক মিজানুর রহমান জানান, ভারত থেকে নেমে আসা উজানের পানি এক তরফাভাবে আটকিয়ে ভারত তাদের প্রয়োজন মিটানোর পর কেবল উদৃত্ত্ব পানি টুকু পাচ্ছে বাংলাদেশ। পানির নায্য হিস্যা পাওয়া গেলে এ নদীগুলোতে আবারও শ্রোত ধারা ফিরে আসবে। তবে এই নদীগুলোর পলি অপসারণ ও পুনঃখনন না করায় ভরাট হয়ে যায় এবং রিজার্ভারে পানি না থাকায় নদীগুলো বর্তমানে শুকিয়ে ধু-ধু বালুচরে পরিনত হয়েছে। সরকারের নিরবতা আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের ব্যর্থতার কারনেই নদীসমূহ অকার্যকর হয়ে হারাচ্ছে অস্তিত্ব। নদী রক্ষা, পরিবেশ বাচার জন্য আন্দোলন- সংগ্রাম হয়। কিন্তু এই নদীর বিষয়টি নিয়ে কেউ না ভাবায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই এলাকার বাসিন্দ খাইরুল ইসলাম। বর্তমানে নদীতে পানি প্রবাহ না থাকায় দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে, এই নদীসমূহ এক সময় খরস্রোতা ছিলো। এখন শুকনা মৌসুমে এসব নদীর বুকে স্হানীয়রা ইরি- বোরোসহ বিভিন্ন জাতের ফসল এবং শাকসবজিও চাষাবাদ করছেন। একটি সূত্র জানায়, প্রায় ৫ যুগ আগেও নদীগুলো ছিলো বহমান। সারা বছরই এসব নদী প্রবাহিত হত যদুকুলপতি ছাপিয়ে। ছিলো বাঙ্গালীর চিরচেনা নদীর রুপ। সে সময় নদী সমুহে চলাচল করতো পালতোলা নৌকা। কিন্তু বছরের পর বছর উজান থেকে পানির শ্রোতে নেমে আসা পলিতে ভরাট হয়ে এখন পরিনত হয়েছে বালু চরে। তাই ওইসব নদীর বুকে বেসরকারি এনজিও সংস্থাদের পরামর্শে শুকনো মৌসুমে চাষাবাদ করা হচ্ছে বিভিন্ন ফসলের। এদিকে নদী সমুহ ভরাট হওয়ার ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এর আগে ওইসব নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো তিস্তা পাড়ের মানুষ। এদিকে তিস্তার তীরবর্তী ডালিয়া বাইশ পুকুর, জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা, ডাউয়াবাড়ী, শৌলমারী ও কৈমারী ইউনিয়নের প্রায় ২৫/৩০ কিঃমিঃ জুড়ে ওইসব নদীর বুকে চাষাবাদ হচ্ছে আলু, মরিচ, ভূট্টা, পাট, বোরো, পিয়াজ, বাদাম সরিষা, তিল তামাক, লাউ সিম কাউন ধুনিয়া রসুন ও মিষ্টি কুমড়া সহ নানান জাতের শাকসবজি। আর কৃষকদের প্ররিশ্রমে এসব ফসল নিজ এলাকার চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে গিয়ে মানুষের চাহিদা পুরণের পাশাপশি অর্থনৈতিক ভাবে লাহবান হচ্ছে চর এলাকার খেটে খাওয়া দরিদ্র কৃষকরা। চরের চাষাবাদ কারী কৃষক হাবু মিয়া জানায়, নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়া জমিগুলো আবার জেগে উঠায় আমরা বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতে পারছি। অন্যদিকে চলতি বোরো মৌসুমের জন্য পৌর শহরের থানা মোড়স্ত আওয়ামীলীগ কার্যালয়ের সামনে বিভিন্ন জাতের চারা বেচা কেনা হচ্ছে। বীজতলা কিনতে আসা মোর্শেদ আলী জানান, বীজের কারণে পাতানো চারা নষ্ট হয়ে গেছে। তাই এখন এক বিঘা জমির জন্য হাইব্রীড জাতের ১৫০ টি বীজতলার আঁটি ৮ শত টাকায় কিনলাম। কৃষক কৃষ্ণ চন্দ্র রায় জানায়, আলু উঠিয়ে সেই জমিতে বিআর -২৯ জাতের চারা লাগানোর জন্য হাটে এসেছি। চারা বিক্রেতা জ্বালাল উদ্দিন বলেন, আমরা বীজতলা সংকটের কারণে বিভিন্ন মোকামতলা থেকে চারা সংগ্রহ করে এখানে বিক্রি করি। আমাদের এখানে বিআর-২৮,২৯ সহ বিভিন্ন প্রজাতির হাইব্রীড চারা বেচা কেনা হচ্ছে। আর এক ব্যবসায়ী জয়নাল জানিয়েছেন, এক মাস ধরে আমরা চারা বিক্রি করে আসছি। কোনও কোন দিনে ১৫/২০ হাজার টাকারও বেশি চারা বেচা কেনা হয়েছে।