বিজ্ঞাপন দিন

জলঢাকার মেয়ে দিয়া সিদ্দিকী আর্চারিতে পেলো স্বর্ণপদক বাংলাদেশের উল্লাস

আব্দুল মালেক, নীলফামারী প্রতিনিধিঃ আইএসএসএফ আর্চারিতে মেয়েদের রিকার্ভ এককে স্বর্ণ পদক পেয়েছে নীলফামারী উপজেলার মাথা ভাঙ্গা এলাকার মেয়ে দিয়া সিদ্দিকী। দিয়া সিদ্দিকী বাংলাভিশন টিভির নীলফামারী জেলা প্রতিনিধির ও জেলা রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি নুর আলম সিদ্দিকী দুলাল এর মেয়ে । পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, দিয়া সিদ্দিকী তিনভাই ভাই বোনের মধ্যে বড়। তার ছোট দুই ভাই। লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার উৎসাহ জাগিয়েছে তার দাদা হাবিবুল্যাহ সিদ্দিকী,দাদী মৃত নুরুন্নাহার বেগম, নানা সাদেক শাহ, নানি শাহিদা বেগমসহ তার বাবা-মা । বাবা- মায়ের আদরের একমাত্র কন্যা দিয়া সিদ্দিকী। সে ২০০৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারী নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকায় জন্মগ্রহন করেন। মা শাহনাজ বেগম সম্পা ও বাবা নুর আলম সিদ্দিকী (দুলাল)। বাবা পেশায় একজন সাংবাদিক, তিনি বাংলাভিশন টিভির জেলা প্রতিনিধি এবং জেলা রিপোর্টাস ইউনিটির সভাপতি । মা শাহনাজ বেগম সম্পা একজন গৃহিনী। 

তিনি সংসার ও ছেলেমেয়েদের খেলাধুলা ও পড়াশোনার দিকেই পরিশ্রমী নারী । তিনি নীলফামারী গালর্স স্কুল থেকে ১৯৯৭ সালে এস.এসসি পাশ করে নীলফামারী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। ২০০০ সালে ঔই কলেজ থেকে এইচ এস সি পাশ করে একই কলেজে অনার্সে ভর্তি হন। শিক্ষা জীবনেই ২০০২ সালে জলঢাকা উপজেলার মাথাভাঙ্গা এলাকার হাবিবুল্যাহ সিদ্দিকীর ছেলে নুর আলম সিদ্দিকী দুলাল এর সাথে বিবাহ হয়। সংসার জীবনে তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ভাইবোনের মধ্যে দিয়া সিদ্দিকী বড়। দিয়া সিদ্দিকীর শিক্ষা জীবন শুরু হয় জলঢাকার আল-মদিনা কেজির স্কুল থেকে । সেখানে প্লে থেকে ওয়ান পর্যন্ত পড়াশোনা করে। এর পরে সে নীলফামারী আনন্দ নিকেতন মডেল স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেনী থেকে পঞ্চম পাশ করে। নীলফামারী সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেনী থেকে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। ২০১৬ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে ২০১৭ সালে অষ্টম শ্রেণি পাশ করে। বর্তমানে সে একই স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্রী। 

গত মঙ্গলবার ২৬ ফেব্রুয়ারী আইএসএসএফ আর্চারিতে মেয়েদের রিকার্ভ একক স্বর্ণ পদক পেয়েছে নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার মেয়ে দিয়া সিদ্দিকী।রিকার্ভ মহিলা একক ইভেন্টে বাংলাদেশের দিয়া সিদ্দিকী ৬-৪ সেট পয়েন্টে ইরানের শোষামেহের শিভাকে হারিয়ে স্বর্ণপদক অর্জন করেন । বস্ত্র ও পাট মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজী দিয়া সিদ্দিকীর হাতে পুরুস্কার তুলে দেন। মোবাইল ফোনে দিয়া সিদ্দিকীর সাথে কথা হলে সে জানায়,২০১৬ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের ট্যালেন্ট হান্টের মাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ৮ম শ্রেণিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ লাভ করি । দিয়াসিদ্দিকী ফোনে আরো জানায়, আমি নিজেও বুঝতে পারিনি এভাবে আর্চারির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ব। ভাগ্যে থাকলে যা হয় আর কি। হঠাৎ করেই আর্চারিতে এসেছি। নীলফামারী গার্লস হাই স্কুলে পড়ার সময় শারীরীক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম স্যার আমার উচ্চতা দেখে আর্চারিতে আসতে বললেন। ওখানেই ট্রায়ালেটি করলাম। এর পর ১০ দিনের অনুশীলন করে বিকেএসপিতে এসে ট্রায়াইলে টিকে গেলাম। ভর্তি হলাম অষ্টম শ্রেণিতে। “ দিয়া সিদ্দিকী আরো বলেন, এর আগে কোনো দিন ভাবতে পারিনি আমি কখনো স্বর্ণপদক পাবো। 

প্রথমে স্বর্ণের পদক জিতেছি খুব ভালো লাগছে। আমার মনে এখন উত্তেজনা কাজ করছে। এটাই আমার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বর্ণ পদক। ফাইনালে খেলতে নামার আগে একটু ভয় করছিল। মনে হচ্ছিল পারব কিনা। শরীর কাঁপছিল। ভয় লাগছিল। কারণ এটা আমার প্রথম আন্তর্জাতিক গেম। ইরানের প্রতিযোগীও কঠিন প্রতিপক্ষ ছিল। তবে অনুশীলনে আমি ভালো করেছিলাম। তাই আত্মবিশ্বাসও ছিল ভালো করার। নীলফামারী জেলাবাসির মুখ উজ্জ্বল করতে পেরে আমি আনন্দিত। এজন্য সকলের সহযোগিতা ও দোয়া কামনা করছি। দিয়া সিদ্দিকীর এই অর্জনের বিষয়ে তার বাবা নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, দিয়ার এই অর্জনে আমি গর্বিত, আমি মনে করি দিয়া সিদ্দিকী এখন আর আমার মেয়ে নয়। সে স্বর্ণপদক পেয়ে নীলফামারী জেলাবাসির মুখ উজ্জ্বল করেছে । 

এটা নীলফামারী জেলাবাসির গর্ব। আর নীলফামারীর মেয়ে হয়ে এই স্বর্ণ পদক অর্জন করা মানেই নীলফামারীবাসীর জন্য গর্বের বিষয়। আমার দিয়া সিদ্দিকী এখন সকলের মেয়ে। পরে তিনি বিকেএসপি ও আর্চার ফেডারেশন এর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। দিয়ার বাবা আরো জানান, মেয়ের স্বর্ণপদক পাওয়ার খবর পেয়ে তার মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে রাতে ভাত খেতে ভুলে গেছে। দিয়া সিদ্দিকীর মা শাহনাজ বেগম জানান, হৃদয়ের লালিত স্বপ্ন সব নারীর হয়ত পূরণ করা স্বম্ভব হয় না। তবে সন্তানের সফলতার মধ্যে অনেক মা খুজে পায় তার আত্মতৃপ্তি ।