বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারীতে অচেনা এক পাগলকে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনাতে গ্রাম পুলিশ গোপাল চন্দ্রের উদ্যোগ


আব্দুল মালেক, নীলফামারী প্রতিনিধি : মানুষ মানুষের জন্য,মানুষের বিপদের সময় পাশে থেকে সহযোগিতা করাই মানুষের ধর্ম।একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের জন্যই। বিপদে-আপদে, সমস্যা-সংকটে ছুটে এসে সাহায্য করবে—এমন প্রত্যাশা মানুষ মাত্রই করতে পারে। মানব জীবনের সম্পূর্ণতা আর তৃপ্তির জন্য সমাজের অসহায়-পীড়িতদের জন্য কিছু করা দরকার। আমাদের সবারই সুযোগ রয়েছে মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলার।আমি, আপনি, এভাবেই এগিয়ে আসতে পারি সকলেই। দাঁড়াতে পারি বিপদে মানুষের পাশে।ক্ষুধা লাগলে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন তেমন আলোকিত জীবন গড়তে হলে শিক্ষার প্রয়োজন। শিক্ষাগুরুরা সব সময় বলতেন মানুষ মানুষের জন্য। পৃথিবীর মধ্যে সব চাইতে বড় আদালত মানুষের বিবেক। আমরা অনেক মানুষ আছি, আমাদের বিবেক আছে ঘুমিয়ে। সমাজে কিছু মানুষ আছেন যারা স্বপ্ন দেখেন মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ করার।মানুষের জন্য মানবতা, মানবতার জন্যই মানুষ,অসহায় এবং বঞ্চিত মানুষের উপকারে নিজেকে আত্মনিবেদন করার এবং অন্যকে এতে উৎসাহিত করা। অনেক বছর বাঁচলেই কেবল বড় মানুষহওয়া যায় না।একটু সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে যদি একটি প্রাণ বাঁচে; একজন মানুষ, বাঁচার স্বপ্ন দেখে—তাতেই হয়তো জীবনের সার্থকতা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। মানুষ মানুষের জন্য এ উপলব্ধি ও গভিরতা এদেশের অনেক মানুষের মাঝে নেই। আর এই উপলব্ধি ও গভিরতা নেই বলেই মানব সেবার জন্য এই মহৎ কাজে কারো কোন আগ্রহ দেখাই যায়না। মানবসেবার নামে আত্ন সেবার প্রবনতাই এদেশে চোখে পড়ে বেশি। মানব সেবা থেকেই সমাজ সেবার প্রশ্নটি এসে যায়। এদেশে এখনো এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা মানবসেবায় যথেষ্ট আন্তরিক। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষের সেবাইকেই তারা পরম ধর্ম বলে বিশ্বাস করেন। এমন এক যুবক নাম গোপাল চন্দ্র রায়, পিতা সুবল চন্দ্র রায়, গ্রাম পূর্ব বোড়াগাড়ী, ২ নং ওয়ার্ড, উপজেলা ডোমার, জেলা নীলফামারী। তার স্বপ্ন ছিল লেখাপড়া শেষে ভালো একটা সরকারি চাকুরী পাওয়ার। সে ডোমার সাহেব পাড়া পলিটেকনিক্যাল কলেজ থেকে ইলেক্ট্রনিক ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং ১৬ সালে পাশ করেছে। ২০১৮ সালের ১৪ নভেম্বর গ্রাম পুলিশের চাকরীতে যোগদান করে মানবসেবা মূলক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। এরেই হঠাৎ ২৮ রমজানে দিবাগত রাতে ডোমার বোড়াগাড়ী বাজারস্থ গোমানাতি সড়কে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা অপরিচিত এক পাগলকে তুলে নিয়ে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। সে কোন রকম কথাও বলতে পারেনা। সেই থেকে ঐ পাগলের চিকিৎসা ডোমার উপজেলার বোড়াগাড়ী হাসপাতালে চলছে। সে এখন কিছুটা হলেও কথা বলতে পারে। সোমবার সরেজমিনে গেলে জানা যায়, পাগলটি বেশ কয়েক মাস যাবত এলাকায় ঘোরাঘুরি করে আসে। সে কোন প্রকার কথা বলতে পারেনা। এমনকি নাম কি, বাড়ি কোথায় তাও জানেনা কেউ। ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তারদের চিকিৎসা ও নার্সদের সেবায় একটু সু্স্থ হয়েছে । সে এখন কিছুটা কথাও বলতে পারে। তার নাম বিকাশ চন্দ্র, পিতা গোফাধর, মাতা উলোবালা রানী, স্ত্রী রত্না রাণী, দুই সন্তানের বাবা বলে সে জানায়। গ্রামের বাড়ি কাজলদিঘী, থানা বীরগঞ্জ, জেলা দিনাজপুর। তার চিকিৎসার কোন ঘাটতি না থাকলেও, মেডিকেলের পরিবেশ নষ্ঠ করে। প্রসাব-পায়খানা করলে গ্রাম পুলিশ গোপাল চন্দ্র নিজের হাতেই পরিষ্কার করে এবং গোসল দেয়। গোপাল চন্দ্র জানান, অসহায় মানুষ আমার অস্থিরতায় ভুগি। কি ভাবে এই অসহায় মানুষদের সেবা করা যায়। পাগল বিকাশ চন্দ্রকে সুস্থ করে তার পরিবারের হাতে যেন তুলে দিতে পারি, সে জন্য আপনাদের (সাংবাদিক) সহযোগীতার প্রয়োজন । পাগলকে সুস্থ করে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারে সেজন্য সকলের সার্বিক সহযোগীতা কামনা করেন, গ্রাম পুলিশ গোপাল চন্দ্র রায়। গ্রাম পুলিশ গোপাল চন্দ্রের প্রশংসা করে ডোমার হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ রায়হান বারী বলেন, গোপাল এক অচেনা পাগলকে হাসপাতালে নিয়ে আসে, আমরা তাকে ভর্তি করাই। ঠিকমত চিকিৎসা সেবা পাওয়ায় বর্তমানে সে একটু সুস্থ, কথা বলতে পারতোনা, এখন একটু হলেও কথা বলতে পারে। ওর কারনে অন্যান্য রুগিরা ভোগান্তিত্বে থাকে, তারপরও চিকিৎসার কোন কমতি নেই। তবে এ ধরনের মেন্টালিজাম রুগির পাশে সবসময় লোক থাকতে হবে, তাহলে ভালো চিকিৎসার জন্য মেন্টাল হাসপাতালে পাঠাতাম। এ ব্যাপারে ডোমার থানার ওসি মোস্তফিজার রহমান বলেন, আমাদের একজন গ্রাম পুলিশ এধরনের মানবসেবা করে আসছে, এটা পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গৌরব। তার এই কর্মকান্ডে আমিও সর্বাত্মক সহযোগীতা করবো। এবিষয় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবুল বাশার মোঃ আতিকুর রহমান জানান, আমি শুনে খুব খুশি হলাম, মানবসেবায় আমার গ্রাম পুলিশ কাজ করে, আমরা আনন্দিত। তাং-২৫/০৬/১৯ইং