বিজ্ঞাপন দিন

জলঢাকার একজন মুক্তিযোদ্ধার সফলতার গল্প



মোঃ বজলুর রশিদ জলঢাকা নিউজ : বয়স তখন ১৭-১৮ বছর। টগবগে যুবক, বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। অনেক সপ্ন, অনেক আশা। বড় হবে, চাকরি করবে। কিন্তু দেশ তো স্বাধীন না। উর্দু ভাষায় কথা বলা, অন্য দেশের কথা মতো চলা, মানি না এসব। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণ এবং উদাত্ত আহ্বানে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন আবদুল গাফফার।

নীলফামারী জেলার জলঢাকা উপজেলার পশ্চিম বালাগ্রাম গ্রামে ১৯৫৩ সালে জন্মগ্রহণ করেন আবদুল গাফফার। চার ভাই চার বোনের মধ্যে আবদুল গাফফার তৃতীয়। বাবা-মায়ের আদরের সন্তান। ১৯৬৭ সালে এসএসসি পাশ করার পর রংপুর কারমাইকেল কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ালেখা চলাকালীন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন দেশকে স্বাধীন করার জন্য। 

তিনি ১৯৭১ সালে ১৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার দেওয়ানগঞ্জ এ অবস্থিত ইয়ুথ ক্যাম্পে যোগদান করেন । সেদিন সন্ধায় মূর্তি ক্যাম্প নামক (মুজিব ক্যাম্প ) প্রশিক্ষণের জন্য গমন করেন ২৯ দিন প্রাথমিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ শেষে সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্ট শাখায় প্রশিক্ষণ নেন তার বডি নং S/25 । সমস্ত প্রশিক্ষণ শেষে জলপাইগুড়ি জেলার মানিকগঞ্জের পাশে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে বড়শশী বোদা থানায় ক্যাম্প স্থাপন করে যুদ্ধ পরিচালনা করেন ।যুদ্ধকালীন সময়ে ইন্টেলিজেন্ট শাখায় কাজ করা অবস্থায় চিলাহাটি ভগদাবাড়ী নামক স্থানে দিনের বেলায় রেকি করে ভোররাত্রে মুক্তিরহাট নামক স্থানে পাকসেনাদের হিট করতে গিয়ে কোন প্রকার জীবন নিয়ে দলবলসহ ক্যাম্পে ফিরে আসেন ,সেদিন তিনি দুজন সহযোদ্ধাকে হারিয়ে ফেলেন । 

এসময় তার সাথে ছিল মেজর গোলাম কোম্পানি কমান্ডার ও তিনি নিজেই সেকশন কমান্ডার তার সাথে আরও ছিল দেবীগন্জ পঞ্চগড় এর অনিল ও ভূঁইয়া লালমনিরহাটের শহীদুল্লাহ রংপুর পীরগাছার সালামসহ আরো অনেকে। যুদ্ধে অনেক বীভিষিকাময় স্মৃতি জড়িয়ে আছে তার। বর্তমানে আবদুল গাফফার একজন সফল বাবা।

যুদ্ধ শেষে আবার নিজ গ্রামে ফিরে এসে পড়ালেখা শুরু করেন তিনি। ১৯৭২ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে একাদশ শ্রেণী পাস করার পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালে ইংরেজিতে সম্মান শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং পরবর্তীতে কারমাইকেল কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানে মাস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন । 

পড়ালেখা শেষ করার পর তিনি জলঢাকা ডিগ্রি কলেজে গ্রন্থাগারক হিসাবে ১৯৮০ সালে যোগদান করেন। পরবর্তীতে সেই কলেজে গ্রন্থাগার ও তথ্য বিজ্ঞানের প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন ।এরপর তিনি শামিমা বেগমের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন । এখন তিনি দুই সন্তানের বাবা। বড় মেয়ে শাকিলা খাতুন সহকারী শিক্ষিকা রানী বৃন্দাবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ডিমলায় ও ছোট ছেলে মোঃ সাদিক-উল ইসলাম এমএস রসায়নবিদ সেভরন বাংলাদেশ চাকরিরত আছেন ।
বাঙালির অবিসংবাদিত মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের ধারক-বাহক হয়ে শিক্ষাজীবনে তিনি ছাত্রলীগের পতাকাতলে ঠাঁই নিয়েছেন।১৯৬৯ সালে জলঢাকা থানা ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ১৯৭২ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে সন্ধানী নামে একটি পত্রিকা বের করেন । তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হল শাখার বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন , তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাক্সু ) আন্ত কক্ষ সম্পাদক ছিলেন। বর্তমানে তিনি জলঢাকা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির তিনি জলঢাকা উপজেলা শাখার সভাপতি ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কেন্দ্রীয় কমিটি এছাড়াও তিনি বিভিন্ন ধরনের সংগঠনের সঙ্গে জড়িত আছেন । তিনি শিক্ষাবিদ সদস্য, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় একাডেমিক কাউন্সিল (মহামান্য রাষ্ট্রপতি মরহুম জিল্লুর রহমান কর্তৃক মনোনীত) 

বর্তমানে তিনি অনেক সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত আছেন , সভাপতি শতফুল ফুটতে দাও সংস্থা,সভাপতি জলঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্প,সভাপতি জলঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের প্রতিবন্ধী ও বৃদ্ধদের উঠার জন্য র্যম্প নির্মাণ,সভাপতি সরকারি বালিকা প্রাথমিক বিদ্যালয় জলঢাকা,সভাপতি পশ্চিম বালাগ্রাম পানি ব্যবস্থাপনা পর্ষদ, সাধারণ সম্পাদক দুন্দিবাড়ী ডিএফসি অ্যাসোসিয়েশন তিস্তা প্রজেক্ট,সভাপতি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট জলঢাকা উপজেলা,সভাপতি ভাওয়াইয়া পরিষদ ঠকরারডাঙ্গা কৈমারী জলঢাকা,সভাপতি রেলপথ চাই কমিটি জলঢাকা,আহ্বায়ক ভিসামুক্ত বিশ্ব আন্দোলন জলঢাকা উপজেলা শাখা,উপদেষ্টা জাতীয় পরিবেশ মানবাধিকার সোসাইটি জলঢাকা উপজেলা । 

আজীবন সদস্য-(০১২৩) বাংলাদেশ গ্রন্থাগার সমিতি,বেলিড,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেজিঃ গ্রাজুয়েট,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন,ইংরেজি বিভাগ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় রেজি নং- ENAR4-1474, রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ ।

জলঢাকা উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে জলঢাকায় নির্মিত হয় দেশের বৃহত্তম দ্বিতীয় শহীদ মিনার ,কেন্দ্রীয় এই শহীদ মিনার নির্মাণের ক্ষেত্রে যিনি মূল ভূমিকা রাখেন তিনি হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল গাফফার। বর্তমানে তিনি শহীদ মিনারের পাশে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার ও মুক্তিযুদ্ধ ফাউন্ডেশন (ট্রাস্ট ) নির্মাণের ক্ষেত্রে তিনি নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন । বিভিন্ন জাতীয় দিবসের আহবায়ক তিনি । 

বর্তমানে তিনি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে বিভিন্ন প্রকার সামাজিক কাজ করে থাকেন যেমন - কন্যাদায়গ্রস্ত পরিবারকে সহায়তা প্রদান,ঝরে পড়া শিশুদের স্কুলগামী করণ ও শিক্ষা উপকরণ বিতরণ,প্রাকৃতিক দূর্যোগকালীন সময়ে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে সহায়তা প্রদানসহ গ্রামীণ রাস্তাঘাট সাধ্যমত মেরামত করা, তাছাড়া ,গরীব ছাত্র-ছাত্রীদেরকে প্রতি মাসে বৃত্তি প্রদান করা এবং প্রয়োজন অনুযায়ী বই, খাতা, কলম কিনে দেয়া,খেলাধুলার জন্য নিয়মিত বল, ব্যাট, ফুটবল সহ যাবতীয় খরচ পাতি বহন করা,পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পাওয়া সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে মাসিক অনুদান প্রদান করা,বাল্যবিবাহ রোধ এবং মেয়েদেরকে শিক্ষিত করতে আপ্রাণ চেষ্টা করা এবং তিনি নিজে গিয়ে অভিভাবকদেরকে বুঝাতেন এবং নিজ উদ্দ্যোগে সব রকম সহায়তা দিতেন।

যাতে অভিভাবকগণ তাদের মেয়েদের লেখাপড়া করাতে উৎসাহিত হন,ছাত্র-ছাত্রীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে তিনি বিভিন্ন সময়ে সাধারন জ্ঞানের প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। সবাইকে লেখাপড়ার পাশাপাশি পত্রিকা পড়তে, সাধারণ জ্ঞানে দক্ষ হতে সব সময় উৎসাহিত করেন,এছাড়াও তিনি ব্যক্তিগত ভাবে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে, আর্থিক ভাবে সকল মানুষকে সহযোগিতা করেন ,এমনকি এখনো নিরবে করে যাচ্ছেন।