বিজ্ঞাপন দিন

বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের আজব কিছু ঘটনা

জল ডেস্ক ; প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে যাতায়াত করেছেন টেডি টাকার নামের এক ডুবুরি। কয়েক বছর আগের কথা। একদিন সকালবেলা বারমুডার বেলাভূমিতে টেডি একটি অদ্ভুত বস্তু দেখতে পেলেন। সেটি ছিল ১৫০০ থেকে ২০০০ পাউণ্ড ওজনের উজ্জ্বল সাদা একটি পিণ্ড। স্থানীয় লোকেরা ওই রহস্যময় বস্তুটির নাম দিল বারমুডা ব্লপ। সেটি পরীক্ষা করে টেডি বলেন, ‘জিনিসটি যে জৈব পদার্থ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এরকম কোনো প্রাণী কখনও দেখা যায়নি।’ এ পিণ্ডের একটি টুকরা কেটে নিয়ে গবেষণা করা হল মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগে। সেখান থেকে তথ্য পাওয়া গেল, ওই পিণ্ডটি কোনো প্রাণীদেহেরই অংশ। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি খুব অদ্ভুত কোনো কোলাজেন টিউমার। আর সেটি অবশ্যই কোনো বড়সড় জলচর প্রাণীর। যেমন তিমি। কিন্তু আরেক দল গবেষক বলেছেন, ওটি একটি প্রকাণ্ড অক্টোপাস। রহস্যময় ব্যাপার হল- পিণ্ডটি বেলাভূমিতে পড়ে থেকে থেকে শেষ পর্যন্ত ভেঙে টুকরা টকুরা হয়ে যায়। অথচ তাতে এতটুকু পচন ধরেনি। বারমুডার এই নতুন রহস্যের মীমাংসা হয়নি। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের রহস্যময় সব অন্তর্ধানের কারণ নিয়ে অনেক তত্ত্ব দাঁড় করানো হয়েছে। কেউ বলেছেন, ওখানকার সমুদ্রে বা আকাশে আস্ত একটা ফাটল আছে। প্রকৃতির সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে বিমান বা জাহাজ হারিয়ে যায় চিরকালের মতো। কেউ বলেন, অজানা এক সভ্যতার কথা, যেখানে আগুনের গোলা লাফিয়ে ওঠে। বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যায় সব জাহাজ ও উড়োজাহাজ। কারও মতে, ওই অঞ্চলে পৃথিবীর অভ্যন্তরে ভূমিকম্পের জন্য বিশাল জলস্তম্ভ জাহাজ, উড়োজাহাজ সবকিছুকে নিজের গহবরে টেনে নেয়। কেউ বলেছেন, অন্য গ্রহের প্রাণী বা এ জাতীয় কিছু, যা আপাতদৃষ্টিতে অবিশ্বাস্য। কেউ আবার ব্যাখ্যা করেছেন ফোর্থ ডাইমেনশন বা চতুর্থ মাত্রার। তাদের মতে, সময়ের একটা অনন্ত ফাটল ওই অঞ্চলে সক্রিয় থাকে। ওইসব জাহাজ ও বিমান সময়ের সেই রহস্যময় ফাটলে পড়ে হারিয়ে যায় বর্তমান কালের কাছ থেকে। তারা চলে যায় সুদূর অতীতের কোনো সময়ে। নয়তো ভবিষ্যতের গর্ভে। কেউ আবার চুম্বকীয় তত্ত্বের মাধ্যমে রহস্যটি মীমাংসা করতে চেয়েছেন। তাদের মতে, ওই অঞ্চলে আকাশ ও সমুদ্রের মধ্যে এক তড়িতাহত ক্রিয়া-বিক্রিয়া ঘটে থাকে। সেখানে আছে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী চৌম্বকক্ষেত্র। কারও মতে, ওই রহস্যময় অংশে পর্যায়ক্রমে অজানা এ রাসায়নিক যৌগের সৃষ্টি হয়। সেই যৌগ যাবতীয় ইচ্ছাশক্তি ও ইন্দি য়ের অনুভূতিকে অবশ করে দেয়। সমুদ্রের মধ্যে বিভিন্ন বিপাকক্রিয়ার ফলে এক অজানা জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়া চলে। এর ফলে সেখানে রহস্যময় ঘটনাগুলো ঘটেছে। ফ্লাইট নাইনটিন : মার্কিন বিমান বাহিনীর ফ্লাইট ১৯, যা ৫টি টিভিএম আভেঞ্জার টর্পেডো বোমারু বিমানের একটি। এটি প্রশিক্ষণ চলাকালে ১৯৪৫ সালের ৫ ডিসেম্বর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়। বিমান বাহিনীর ফ্লাইট পরিকল্পনা ছিল ফোর্ট লডারদেল থেকে ১৪৫ মাইল পূর্বে এবং ৭৩ মাইল উত্তরে গিয়ে, ১৪০ মাইল ফিরে এসে প্রশিক্ষণ শেষ করা। বিমানটি আর ফিরে আসেনি। নেভি তদন্তকারীরা নেভিগেশন ভুলের কারণে বিমানের জ্বালানিশূন্যতাকে বিমান নিখোঁজের কারণ বলে চিহ্নিত করেন। বিমানটি অনুসন্ধান এবং উদ্ধারের জন্যে পাঠানো বিমানের মধ্যে একটি বিমান পিবিএম ম্যারিনার ১৩ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়। ফ্লোরিডা উপকূলে থাকা একটি ট্যাঙ্কার একটি বিস্ফোরণ দেখার রিপোর্ট করে কিন্তু উদ্ধার অভিযানে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। ইউএসএস : যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-ইতিহাসে সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে ইউএসএস সাইক্লপস নিখোঁজ হয়ে যাওয়া। অতিরিক্ত ম্যাঙ্গানিজ আকরিক ভর্তি বিমানটি ১৯১৮ সালের ৪ মার্চ বার্বাডোস দ্বীপ থেকে উড্ডয়নের পর একটি ইঞ্জিন বিকল হয় এবং ৩০৯ জন ক্রুসহ নিখোঁজ হয়। যদিও কোনো শক্ত প্রমাণ নেই তবু অনেক কাহিনি শোনা যায়। কেউ বলেন ঝড় দায়ী, কেউ বলেন ডুবে গেছে আবার কেউ এ ক্ষতির জন্যে শত্রুপক্ষকে দায়ী করেন। উপরন্তু, সাইক্লপস-এর মতো আর দুইটি ছোট জাহাজ প্রোটিউস এবং নেরেউস দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে নিখোঁজ হয়। সাইক্লপসের মতো এ জাহাজ দুটিতেও অতিরিক্ত আকরিক ভর্তি ছিল। তিনটি ক্ষেত্রেই ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মালামাল বহনের কারণেই জাহাজডুবি হয় বলেই ব্যাপক ধারণা করা হয়। ডগলাস ডিসি ৩ : ২৮ ডিসেম্বর ১৯৪৮ সালে একটি ডগলাস ডিসি ৩, ফ্লাইট নম্বর এনসি ১৬০০২, সান জুয়ান, পুয়ের্তো রিকো থেকে মিয়ামি যাওয়ার পথে নিখোঁজ হয়। বিমানে থাকা ৩২ জনসহ বিমানটির কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। সিভিল এরোনটিক্স বোর্ডের তদন্ত নথিপত্র থেকে বিমানটি নিখোঁজ হওয়ার সম্ভাব্য একটি কারণ পাওয়া যায়, সেটি হল- বিমানের ব্যাটারি ঠিকমতো চার্জ না করে পাইলট সান জুয়ান থেকে রওনা দেন। কিন্তু এটা সত্যি কিনা তা জানা যায়নি।