বিজ্ঞাপন দিন

ডোমারে বিদ্যালয়ের ছাদ বাগানে ফুল ও ফলের গন্ধে বেড়েছে ভ্রমরের আনাগোনা

রতন কুমার রায়, নীলফামারী প্রতিনিধি: ফুল-ফলে ভরে গেছে পাঙ্গা বালিকা বিদ্যালয়ের ছাদ বাগনটি। করোনা মহামারীতে বিদ্যালয়টি বন্ধ থাকায় ছাত্রীদের নেই কোন পদচারনা। তবে শুনসান পরিবেশে বাগনটিতে ফুল-ফলের মধু আহরণে মৌমাছি ও বিভিন্ন ভোমরের বেড়ে গেছে আনাগোনা। পাঁকা পেয়ারা, আম, পেঁপে মোস্তি করে খাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। নিজের অর্থায়নে গড়া বাগানটির প্রতিষ্ঠাতা বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) সুকুমার রায় এ মনোরম দৃশ্য উপভোগ করছেন মনের আনন্দে। বাগানটি নীলফামারীর ডোমার উপজেলার পাঙ্গা মটুকপুর ইউনিয়নে অবস্থিত।

চারটি আমের গাছ ও কয়েকটি ফুলের চারা লাগিয়ে শিক্ষক সুকুমার রায় কর্মস্থল বিদ্যালয়ের ছাদ বাগানের যাত্রা শুরু করেন ২০১৭ সালের শেষের দিকে। বর্তমানে শতাধীক জাতের চার শতাধীক ফল, ফুল, ঔষুধি, শাক-সবজি ও বাহারি গাছের প্রাকৃতিক সমারোহে পরিপূর্ন করে তুলেছেন শখের বাগানটি।

বাগানটিতে আম, মাল্টা, পেয়ারা, পেঁপে, কমলা, আঙ্গুর, আঁতা, বেল, বাঁতাবি লেবুসহ বিভিন্ন জাতের ফলের গাছ রয়েছে। আছে গোলাপ, চামেলী, চাঁপা, বেলী, গন্ধরাজ, চেরী, এ্যালমুন্ডা, কলাবতী ও টগর ফুলের গাছ। এছাড়াও তুলসী, থানকুচি, পুদিনা, ঘিতকুমারী, পাথরকুচি, আকন্দসহ বিভিন্ন উপকারী গাছ। করলা, লাউ, মিষ্টি কুমড়া, মরিচ, পুঁইশাকও রয়েছে ছাদ বাগানটিতে। সেই সাথে বাড়তি শোভাবর্ধন করছে বিভিন্ন পাতা বাহারের গাছ।

দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয় ছুটি থাকায় নিজের হাতে গড়া বাগানটি পরিচর্যায় দিনের অধিকাংশ সময় কেটে যায়। মাঝে মাঝে রাতের বেলায় অন্যান্য শিক্ষকদের সাথে চলে আড্ডাবাজি ও বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয় বলে জানান কৃষি শিক্ষক সুকুমার রায়।

তিনি বলেন, তিন বছর আগে শখের বশে বিদ্যালয়ের ছাদে কয়েকটি গাছের চারা দিয়ে বাগান শুরু করি। প্রকৃতির সানিদ্ধ্য আমাকে অনেক বেশী আকর্ষন করে। বাগানটিতে বিভিন্ন জাতের গাছ লাগানো বাড়াতে থাকি। প্রতিমাসে বেতনের একটি অংশ দিয়ে বিভিন্ন জাতের গাছ কিনে রোপন করি। যখন ফুল-ফল ও বিভিন্ন জাতের গাছে ছাদ বাগানটি ভরপুর হয়ে গেল। সেই সময় হতে কৃষি ক্লাসটি ছাদেই নেয়া শুরু করি। ছাত্রীরাও খোলা আকাশে প্রকৃতির মাঝে ক্লাস করতে বেশী আগ্রহী। অনেক ছাত্রীই এখান হতে চারা নিয়ে বাড়িতে বাগান করেছে। এটাই আমার আনন্দ। তিনি বলেন, সরকারী-বেসরকারী কোন সহায়তা পেলে আরো দূর্লভ গাছ লাগাতে পারতাম। বিদ্যালয়ের মাঠের এক দিকে আরেকটি বাগান করার পরিকল্পনার কথাও তিনি জানান। তিনি বলেন, দেশের প্রতিটি বিদ্যালয়ে একটি করে বাগান থাকলে, ছাত্র-ছাত্রীদের গাছ লাগানোর আগ্রহ বেড়ে যাবে। আর এতে পরিবেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য উন্নত হবে।

দশম শ্রেনীর ছাত্রী উম্মে ফাতিমা, শিখা রানী, অষ্টম শ্রেনীর পুষ্প আক্তার, মাধবী রানী জানান, বিদ্যালয় খোলা থাকার সময়, আমরা কৃষি ক্লাসটি ছাদ বাগানে করতাম। প্রকৃতির মাঝে পড়াশুনা করতে ভালোই লাগে। তারা আরো জানান, স্যারের কাছে বিভিন্ন গাছে চারা নিয়ে আমরা বাড়ীতে বাগন করেছি। এখন করোনার মহামারীর সময়ে বাগানের পরিচর্যা করে অবসর সময় পার করছি মনের আনন্দে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরনীকান্ত রায় জানান, ছাদের উপর শিক্ষক সুকুমার রায় নিজস্ব অর্থায়নে একটি সুন্দর বাগান করেছেন। এখন অনেক ফল ও ফুলে ভরে গেছে বাগানটি। অন্যান্য শিক্ষকসহ বিভিন্ন দর্শনার্থীও মাঝে মধ্যে এখানে বেড়াতে আসেন। বাগনটির পরিধি বাড়াতে আমরাও তাকে সহায়তা করি।