বিজ্ঞাপন দিন

বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের খলনায়কদের ‘বিচারের দাবিতে’ জলঢাকায় ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ফাউন্ডেশনের সংবাদ সম্মেলন

আবেদ আলী স্টাফ রিপোর্টারঃ নীলফামারীর জলঢাকায় ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী পালনের মধ্যদিয়ে বঙ্গবন্ধু সহ তার পরিবারকে হত্যাকান্ডের নেপথ্যের খলনায়কদের বিচারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ফাউন্ডেশন। শনিবার দুপুরে ওই ফাউন্ডেশনের কক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে শোক সভায় মিলিত হয়। পরে শোকের দিনে “ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ফাউন্ডেশনে”র পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ফাউন্ডেশনের প্রধান সমন্বয়ক যুবলীগ নেতা এনামুল হক। এসময় উপস্থিত ছিলেন, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ফাউন্ডেশন এর শিক্ষক সংঘের সভাপতি শ্রী অনিল চন্দ্র রায়, সাধারণ সম্পাদক সফিয়ার রহমান, ফাউন্ডেশনের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম, সাধারণ রেজোয়ান প্রামানিক, মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র রায়। ফাউন্ডেশনের কার্যকরী সদস্য আলমগীর হোসেন, বিল্লা তৈয়ব, আমজাদ হোসেন, সাইদুল ইসলাম, মমিনুর রহমান প্রমূখ। লিখিত সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গকে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতা দখল করে নেয় সেনাসমর্থিত খোন্দকার মোশতাক সরকার। বঙ্গবন্ধুকে স্ব-পরিবারে হত্যার মাত্র ৯ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২৪ আগস্ট ১৯৭৫ সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থাকাকালীন সময়ে ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অঘোষিত রাষ্ট্রপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদ ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) অধ্যাদেশ জারি করেন। অধ্যাদেশটিতে দুটি ভাগ আছে। প্রথম অংশে বলা হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। দ্বিতীয় অংশে বলা আছে, রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না। ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী গৃহীত হয়। এই সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সকল অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে আইনি বৈধতা দান করা হয়। যে কোন হত্যাকান্ডের বিচার হওয়া আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য জরুরী। সমাজ ও রাষ্ট্র যদি তা করতে ব্যার্থ হয় তবে তার দায়ভার নিতে হবে গোটা জাতিকে। উপস্থিত সুধী, ১৯৭৫ থেকে ১৯৯৬ – এক সুদীর্ঘ ২১ বছরের পথ পাড়ি দিয়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট আবদুল মতিন খসরু ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বিল বাতিলের জন্য 'দি ইনডেমনিটি রিপিল অ্যাক্ট-১৯৯৬' নামে একটি বিল সংসদে উত্থাপন করেন। ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর বাংলাদেশ সংসদে মানবতা ও সভ্যতাবিরোধী কলঙ্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল আইন প্রণয়ন করা হয়। ঘোচানো হয় ২১ বছরের জাতীয় কলঙ্ক। আর সেই সাথে সুগম হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের কাজ শুরু হয় ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর ধানমন্ডি থানায় একটি ফোজদারী মামলা দায়রের মাধ্যমে। ১৯৯৮ সালের ৮ নভেম্বর মামলার যাবতীয় কার্যক্রম শেষে পনেরো (১৫) জন আসামিকে মৃত্যদন্ড প্রদান করা হয়। আসামি পক্ষের পনেরো জন উচ্চ আদালতে আপিল করেন। আপিলে ১২ জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখা হয় এবং ৩ জনকে খালাস দেয়া হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় এলে এ মামলার কার্যক্রম স্থবির হয়ে পরে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয় লাভের পর আওয়ামীলীগ সরকার আবার এ বিচারকার্য চালিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহন করে। ২০০৯ সালে লিভ-টু-আপিল-এর মাধ্যমে এর বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। আপিল শেষে বারো জনের মৃত্যুদন্ড বহাল রাখেন মহামান্য আদালত। ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি তারিখে এদের মধ্যে পাঁচ জনের ফাঁসির মাধ্যমে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়। বাকি ছয় জন এখনও বিভিন্ন দেশের আশ্রয়ে পলাতক অবস্থায় আছেন। পলাতকদের মধ্যে একজন এরই মাঝে বিদেশের মাটিতে মৃত্যুবরণ করেছেন।উপস্থিত সুধী, আপনারা জানেন, ২০১০ সালের ফেব্রুয়াারি মাসে বাংলাদেশ হাইকোর্ট সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে । ফলে আবারও প্রমাণিত হোল সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী যা নাকি ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর প্রণীত কলঙ্কিত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে ধারণ করে ছিল, তা অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। আমরা মনে করি, বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার হয়েছে ঠিকই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের নেপথ্যের খলনায়কদের বিচার হয়নি আজও। প্রায় ৩৫ বছর পর এই হত্যাকান্ডের জন্য সরাসরি