বিজ্ঞাপন দিন

জলঢাকায় ঐক্যের নামে চাঁদাবাজী ॥ এক সীলের মূল্য দুই হাজার টাকা !



ফরহাদ ইসলাম জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃনীলফামারীর জলঢাকায় সাব-রেজিস্ট্রী অফিসে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিনব পন্থায় চাঁদা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। একটি বিশেষ সিল ব্যবহার করে প্রতিটি দলিল সম্পাদনে সমিতির নামে অতিরিক্ত দুই হাজার করে টাকা আদায় করা হচ্ছে জমি গ্রহিতার কাছ থেকে। এমন অনিয়মের বিরুদ্ধে সম্প্রতি জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের সামনে প্রতিবাদ সভা করেছেন দলিল লেখক আনিছুর রহমান ও মোস্তাফিজুর রহমানসহ ভুক্তভোগীরা। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা রেজিস্ট্রার। দলিল লেখক আনিছুর রহমান অভিযোগ করে বলেন,“সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দলিল সম্পাদন করতে গেলে দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন ভেন্ডার ও সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার সরকারি নির্ধারিত ফি এর বাইরে প্রতিটি দলিলে অতিরিক্ত দুই হাজার করে টাকা চাঁদা আদায় করছেন। গত ৩ অক্টোবর থেকে এ কার্যক্রম শুরু হলে বিপাকে পড়েন জমি ক্রেতা বিক্রেতা উভয়ই।”তিনি বলেন,“চাঁদার টাকা পরিশোধে দলিলের পেছন পাতায় একটি বিশেষ সিলমোহর ব্যবহার করছেন তারা। সিল না থাকা দলিল সম্পাদন করছেন না। এতে করে এ সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে জমি ক্রেতা-বিক্রেতারা। চাঁদা পরিশোধ না করে গত ১২ই অক্টোবর আমি একটি দলিল নিয়ে সাব-রেজিস্ট্রারের কামরায় গেলে আমার হাত থেকে কেঁড়ে নিয়ে দলিল খানা ছিড়ে ফেলেন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোকজন। এসময় তাদের নেতৃত্বে আমাকে মারধর করে কার্যালয় থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় সভাপতি- সাধারণ সম্পাদকসহ আট জনের নামে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছি। দলিল লেখক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,“তারা ঐক্যের নামে দলিল লেখকদেরকে সমিতির সদস্য করে ওই চাঁদাবাজী শুরু করেছেন। এতে গড়ে প্রতিদিন এক লাখ টাকার চাঁদা আদায় করছেন। সর্বসাধারণের স্বার্থে আমরা ওই চাঁদাবাজী বন্ধ চাই। সরেজমিনে ”সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আসা জমি ক্রেতা-বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে অতিরিক্ত ওই দুই হাজার টাকা আদায়ের সত্যতা পাওয়া যায়। এসময় উপজেলার কৈমারী ইউনিয়নের যদুনাথ গ্রামের জমি ক্রেতা আশেদুল ইসলাম (৫০) বলেন,“১১ শতক জমি কিনেছি আমার স্ত্রী মনোয়ারা বেগমের নামে। ৯০ হাজার টাকার দলিল করতে দলিল লেখকরা খরচ চাচ্ছেন ১২ হাজার টাকা। গত মাসে এ পরিমান টাকার দলিল সম্পাদন অনেকেই করেছিলেন। তাদের কম খরচ হয়েছে। স্থানীয় ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের সাথে কথা হলে তারা জানায়, দলীয় প্রভাব খাটিয়ে এসব অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছেন আহমেদ হোসেন ভেন্ডার ও তার সহযোগিরা। প্রতিবাদ করলে, মামলাসহ বিভিন্ন হয়রানী করছে প্রতিপক্ষকে। অভিযোগের বিষয়ে জলঢাকা সাব-রেজিস্ট্রী অফিসের দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আহমেদ হোসেন ভেন্ডার উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, দলিল লেখক সমিতির নামে কোন চাঁদা বা অতিরিক্ত টাকা নেয়া হয় না। দলিলের পিছনে বিশেষ সিল ব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমাদের ঐক্যের সীল। এবিষয়ে সাব রেজিস্ট্রার মনীষা রায় বলেন, অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে কোন গ্রাহক আমার কাছে অভিযোগ করেননি। তার টেবিলে থাকা দলিলগুলোর পিছনে বিশেষ সিল প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো কিসের সিল আমার জানা নেই? আপনারা দলিল লেখক বা ভেন্ডারদের সাথে কথা বলেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে জলঢাকা থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তদন্ত চলছে। অভিযোগের বিষয়ে জেলা রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাখওয়াত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন,‘‘সরকারী সিলের বাইরে অন্য কোন সিল ব্যবহার করার এখতিয়ার কারো নাই। যদি প্রমাণিত হয় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়াও তিনি আরও বলেন, ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে একটি প্রতিনিধি টিম গঠন করা হয়েছে।’’  


Post a Comment

0 Comments