বিজ্ঞাপন দিন

ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা পারবে কি স্কুলে ফিরতে !

ফরহাদ ইসলাম জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃ প্রায় দেড়বছরজুরে করোনা ভাইরাসে দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো বন্ধ থাকায় নীলফামারীর জলঢাকায় অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষার আলো থেকে ঝড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এমনই ধারনা করছেন স্থানীয় শিক্ষাবিদরা। প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাসের কারনে সারা বিশ্বের ন্যায় বন্ধ রয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। গেল বছরের ১৮ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষনার পর চলমান করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চলতি বছরের ২৩ মে পর্যন্ত দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষনা করেন সরকার। বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিশেষ করে প্রাথমিকে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ কৃষক,দরিদ্র ও দিনমজুর পরিবারের সন্তান। অনেকে আবার এতিম পরিবারেরও রয়েছে। করোনা ভাইরাসে একদিকে দিনমজুর পরিবারগুলোর আয় কম হওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে হিমশিম খেতে হয় তাদের। অপরদিকে স্কুল বন্ধ থাকায় সংসারের অভাব অনাটনের কারনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের অন্যের দোকানে কর্মচারী রাখতে বাধ্য হয়েছেন অনেক দিনমজুর পরিবার। গত বছর লকডাউনে স্কুল বন্ধ থাকার কারনে মাত্র ১০০ টাকায় জলঢাকা বাজারে একটি চায়ের দোকানে শ্রমিক হিসেবে কাজ শুরু করেন পথকলি শিশু নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২য় শ্রেণীর ছাত্র মেরাজ (৯)। পিতা শফিকুল ইসলাম পেশায় একজন দিনমজুর। ৫ ভাই ১ বোনের মধ্যে ৫ম সে। গত কয়েক বছর আগে অনেক কষ্টে বোনের বিয়ে দেন তার পরিবার। বড় ভাইয়ের পৃথক সংসার। এমনিতেই সংসারে অভাব অনাটন এর মাঝে দিনমজুর পিতার শারিরিক অবস্থাও খারাপ। তাই পরিবারের সিদ্ধান্তেই এখন চায়ের দোকানের শ্রমিক মেরাজ। পথকলি শিশু নিকেতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান,‘‘মেরাজ আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল,সময়মত পূর্নভর্তি না হওয়ায় তার নাম বাদ পড়েছে।’’ এছাড়াও বগুলাগাড়ী এলাকার নিলু নামে ৩য় শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকেও কাজ করছেন একটি চায়ের দোকানে। শুধু এই মেরাজ নিলুই নয় জলঢাকায় এমন কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দোকানের কর্মচারির কাজ করতে। এ বিষয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবিদ সদস্য (একাডেমি কাউন্সিল) বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফ্ফার বলেন,‘‘ বর্তমানে করোনা ভাইরাসে সারাদেশের ন্যায় আমাদের জলঢাকায় দিনমজুর পরিবারের আয় কম হওয়ায় তাদের সন্তানেরা বিভিন্ন দোকানে কর্মচারি হিসেবে কাজ করতেছে। স্কুল বন্ধের প্রায় দেড়বছর যাবত তারা লেখাপড়ার বাইরে থাকায় এবং বর্তমানে বিভিন্ন দোকানের কর্মচারি হওয়ায় আগামীতে স্কুল খুললে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে না যাওয়ার সম্ভাবনায় বেশি। তবে আগামীতে স্কুল খোলার সাথে সাথে সরকার যদি প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিজ নিজ ক্লাস্টারের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের আবার স্কুলে ফেরানোর নির্দেশ দেন এবং শিক্ষকরা যদি সে চেষ্টা করেন তাহলে হয়তোবা ঝড়ে পড়া শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফিরতে পারে।’’

Post a Comment

0 Comments