বিজ্ঞাপন দিন

নীলফামারীর সৈয়দপুরে কুড়ি বছর ধরে বট বৃক্ষে যাওয়া আসা করছে শামুকখোল পাখি



রতন কুমার রায়,ডোমার রিপোর্টার: এক সময়ে বড়বড় বৃক্ষে দেখা যেত নানান ধরনের পাখি।  তাদের পাখার ঝাপটা আর কোলাহলে মুখরিত থাকতো পুরো এলাকা জুড়ে। বৃক্ষ নিধন, ঘন বসতিসহ নানান বৈরীতায় এখন আর পাখিদের তেমন একটা দেখা যায় না। বেড়াতে গিয়ে দেখা মেলে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নে সোনাখুলী গ্রামের একটি পুরাতন বটগাছের  ডালে ডালে বাসা বেঁধেছে একঝাক শামুক খোল পাখি। স্থানীয়রা বলছে পাখিগুলো বাংলা সনের মাঘ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে চলে যায়। 


বিপন্ন প্রায় সামুক খোল পাখিদের স্থানীয়রা স্ব উদ্দ্যেগে দিচ্ছে নিরাপত্তা। উপভোগ করছে পাখিদের প্রকৃতির সাথে কোলাহল। একঝাঁক পাখি বসে আছে গাছের মগডালে। বড় আকারের গাছটি তাদের যেন অভয়ারণ্য। তাদের পাখার ঝাপটা আর কোলাহলে আকাশ-বাতাস যেন মাতিয়ে রাখে। সকালে সোনালি রোদ্র আর গোধূলির মৃদু আলোয় তাদের অপূর্ব সৌন্দর্য প্রষ্ফুটিত হয় ওঠে প্রকৃতির কাছে।

গ্রামবাসীরা করছে পাখিগুলোর দেখভাল। উপজেলা প্রশাসন ইতিমধ্যে পাখির অভয়াশ্রম হিসাবে ঘোষনা করেছেন গ্রামটিকে। স্থানীয় সেচ্ছাসেবি সংগঠন সেতুবন্ধনের সদস্যরা করছে নজরদারি। শামুকখোল পাখি এলাকার মানুষের কাছে স্থানীয় কদমা নামেও পরিচিত। এরা শামুক খেতে খুব ভালোবাসে। শামুক পেলে ঠোঁট দিয়ে শামুকের খোল ভাঙে, তারপর সেটা ওপরে তুলে আকাশের দিকে মুখ করে গিলে ফেলে। এ জন্য এর নাম শামুকখোল। তবে এরা শুধু শামুকই খায় না, খাল-বিলের ছোট ছোট শামুক-ঝিনুক, ছোট মাছ, আর ফসলের মাঠের পোকা-মাকড় খেয়ে জীবন বাঁচায় এই পাখি। নিরাপদ আশ্রয়ে প্রজননও করছে পাখিগুলো। ফলে,সেখানে দিন দিন বাড়ছে পাখির সংখ্যাও।

ঝাঁক বেঁধে শামুক খোলের খাবার শিকার করা এবং দল বেঁধে উড়ে চলা এখানকার প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে। বাংলাদেশে বিলুপ্ত প্রায় এ পাখিটির প্রায় ২০বছর ধরে এ এলাকায় বিচরণ মানুষকেও মুগ্ধ করছে। ফলে স্থানীয় লোকজন এর অবাধ বিচরণে সচেতন রয়েছে।

পৃথিবীতে দুই প্রজাতির শামুক খোল পাখি রয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অধিকাংশ অঞ্চল এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থায়ী সাদা বর্ণের পাখি শামুকখোল। শুধু পিঠ ও ডানায় রয়েছে কালো অংশ। অপর প্রজাতিটি আফ্রিকার বেশির ভাগ অঞ্চলের স্থায়ী পাখি। এরা পুরো কালো বর্ণের। মূলত শামুক খোল বড় আকারের জলচর পাখি। এদের ঠোঁট বড় ও পাশ থেকে খানিকটা চাপা। ঠোঁটের নিচের অংশ উপরের দিকে বাঁকানো।

শামুকখোল দেখতে বকের মতো। তবে অনেক বড়। গায়ের রং ধূসর সাদা। বাসা বাঁধার সময় শরীর একদম সাদা হয়ে যায়। লেজ ও পাখার শেষভাগ কালো রঙের। 

বাংলাদেশের বন্যপ্রাণী আইনে শামুকখোল পাখির এ প্রজাতিটি সংরক্ষিত হলেও বর্তমানে এদের সংখ্যা ক্রমেই কমছে। আবাসস্থল, খাবার ও নিরাপত্তা থাকলে এরা স্থায়ীভাবে বসবাস করে।

কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের  বিএসসি অনার্সের শিক্ষার্থী অন্তরা আক্তার বলেন, বড় শামুক খোলরা বেশী খাদ্য খায়। পাশাপাশি বসবাসের জন্য বেশ পুরাতন লম্বা গাছ এদের প্রথম পছন্দ। তাই প্রাচীন গাছগুলোতে এরা বাসাবাঁধে। তবে পাখিটি অনেকটা দুর্লভ। এক সময় বাংলাদেশের সব জায়গায় শামুক খোল দেখা গেলেও এখন নেই। আর শামুকের প্রতি আসক্তির কারণেই এখানে শামুক ভাঙ্গা, শামুক খোর, শামুক খোল বা শাম খোল নামে পরিচিতি পেয়েছে।


সোনাখুলি গ্রামের পাখি প্রেমী ফনি ভুষন রায় বলেন, সকালের ঘুম ভাঙ্গে পাখির ডাক আর ডানা ঝাপটানো শব্দের মধ্যে দিয়ে। 

আমাদের বাড়ির সামনে বট গাছ রয়েছে সেখানে বাসা বেঁধেছে এই বিরল প্রজাতির শামুক খোল পাখি। পাখি গুলো মাঘ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে আসে। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে চলে যায়। 

সেতুবন্ধন সংগঠনের সভাপতি  আলমগীর হোসেন বলেন, এটি প্রায় বিলুপ্ত। খুবই কম দেখা মেলে পাখিটির। তাই এ পাখিটির যতœসহ সার্বিক বিষয় দেখাশুনা করার জন্য আমরা সচেতনতাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে কাজ করছি। যে কোন পাখি প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষাসহ মানুষের সকল ক্ষেত্রে উপকার করে। তাই শুধু শামুক খোলই নয় সবুজ প্রকৃতিতে বিচরনকারী সব পাখিরই অভয়ারন্য থাকা উচিত।

                                                  











Post a Comment

0 Comments