বিজ্ঞাপন দিন

কোভিড-১৯ প্রেক্ষিতে শিখন ঘাটতির ক্ষেত্র চিহ্নিতকরণ ও তা দূরীকরনে শিক্ষকের ভূমিকা

 


করোনা ভাইরাস সমযোগীয় ভাইরাসের একটি বড় পরিসর, যেগুলি সাধারণত সর্দিজ্বর থেকে শুরু করে মিডল ইস্ট রেসপিরেটার সিন্ড্রোম (মোর্স) ও সিভিয়র । অ্যাককিউট রেসপিরেটরি সিন্ড্রোমের (সোর্স) মতো মারাত্মক রোগ সুষ্টি করে। ২০১৯ সালে চীনের উহান প্রদেশে একটি নতুন করোনা ভাইরাস (কোভিট-১৯) সনাক্ত করা হয়েছিল। এটি একটি নতুন করোনা ভাইরাস যা আগে কখনও মানুষের মধ্যে দেখা যায়নি। কোভিট-১৯ মানুষের একটি সংক্রামক ব্যাধি। আর এই মহামারীর কারণে বিশ্ব, চিরাচরিত যে শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে পরিচিত ছিল এবং অর্থনৈতিকভাবে পৃথিবী বিগত দশকগুলোতে যে অগ্রগতির ধারায় এগুচ্ছিলো , কোভিড-১৯ এ কারণে ব্যাপকভাবে তার নেতিবাচক পরিবর্তন ঘটে। দীর্ঘকালের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা ব্যবস্থার ধরণ ও স্বরুপ বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং ক্রমশ তার আধুনিকায়ন ঘটেছে। কিন্তু কোভিড-১৯ এর কারনৈ যে পরিবর্তন ঘটেছে তাতে নতুন প্রজন্মের আগামীর স্বপ্নসৌধ নির্মানের মূল কেন্দ্র শিক্ষা ব্যবস্থা প্রায় সর্ম্পূন্নভাবে বিঘ্নিত হয়েছে। করোনার কারনে দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ থাকায় মোট শিক্ষার্থীর ৯৪% কোন না কোন ভাবে ক্ষতির শিকার হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ৯৯% নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের শিক্ষার্থী। বেড়েছে শিখন ঘাটতি।

শিখন ঘাটতি কী? হজভাবে বলা যেতে পারে, প্রত্যাশিত শিখনের সাথে অর্জিত শিখনের পার্থক্যই হলো শিখন ঘাটতি। শিখনের ক্ষেত্রে কোনও ঘাটতি সৃষ্টি হলে তা শিক্ষার্থীর পরিপূর্ণ শিখনের অর্জন ও তার সার্বিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। শিখন ঘাটতি শিক্ষার্থীর শিখনের ভিত্তি দূর্বল করে এবং পরর্বতী শিখনের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শিক্ষার্থীর শিখনের ঘাটতি পূরনে শিক্ষকগণই প্রধান ভূমিকা পালন করেন। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দীর্ঘদিন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরাসরি শ্রেণি কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এ ঘাটতি পূরণে সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে ধারাবাহিক শ্রেণি কার্যক্রম প্রচার, অনলাইন শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা, শিখন, বাতায়নে শ্রেণি কার্যক্রম আপলোড , স্ব-শিখনের মাধ্যমে শিখন অর্জনের ব্যবস্থা এবং তা যাচাইয়ের জন্য ওয়ার্কশীট প্রদানসহ নানা ধরনের কার্যক্রমে অংশগ্রহনের সমান সুযোগ নিশ্চিত করা যায়নি।

 

মহামারীকালে শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে এক বেসরকারী গবেষণায় উঠে এসছে যে, দেশের প্রাথমিক পর্যায়ে ৬৯.৫ শতাংশ শিক্ষার্থী দূরশিখনে অংশই নিতে পারেনি। সঙ্গত কারনে শিক্ষার্থীরা ২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রত্যাশিত শিখন পূর্নাঙ্গভাবে অর্জন না করে পরর্বতী শ্রেণিতে উর্ত্তীন হয়েছে। ফলশ্রুতিতে বর্তমানে কিছু সমস্যা পরিলক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষাগ্রহন প্রক্রিয়া দীর্ঘসময় ব্যাঘাতের কারণে শিশুদের পুষ্টিহীনতা, বাল্যবিয়ে, শিশুশ্রম বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কারনে দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের শিশুদের ঝড়ে পড়া বর্ধিত হয়েছে।

  • বিদ্যালয় অনিয়মিত উপস্থিতির প্রবনতা বৃদ্ধি
  • অভিভাবকগনের অসচেতনতা  নিষ্ক্রিয়তা
  • শিক্ষার্থীদের শিক্ষার প্রতি অমনোযোগিতাঅনাগ্রহ  অন্যমনষ্কতা
  • শিখনে যথাযথ অনুশীলনে অনীহা
  • বয়স অনুযায়ী শিখন ক্ষমতা  যোগ্যতা হ্রাস
  • পূর্বে অর্জিত ভাষাগত দক্ষতাম হ্রাস এবং শিখনে জড়তা
  • খেলাধুলার প্রতি প্রবনতা বৃদ্ধি
  • শিষ্ঠাচারশৃংখলা  কর্তব্য পরায়নতা হ্রাস এবং নৈতিক সকল গুনাবলি হ্রাস
  • শিখনফলের স্থায়ীত্ব হ্রাস

শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক অভ্যাসের ব্যাপক পরিবর্তন। এছাড়াও পরিবেশভেদে বিভিন্ন সমস্যা পরিলক্ষিত হয় যা শিখনে ব্যাপক ব্যাঘাত ঘটায়।

শিখন ঘাটতি পূরনে শিক্ষকের করণীয়: সারাদেশে এক শিফটে বিদ্যালয় পরিচালনা করা। কারন সেক্ষেত্রে ২০২২ শিক্ষাবর্ষের নির্ধারিত শ্রেণি কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দকৃত সময় বৃদ্ধি পাবে। ফলে শিক্ষক তার নিজস্ব বিভিন্ন কৌশল প্রয়োগ করার সুযোগ পাবে। যা শিখনফলের স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি করবে।

  • সহশিক্ষাক্রমিক কার্যক্রমের মাধ্যমে শিখন অর্জনের ব্যবস্থা অর্থ্যাৎ বির্তক প্রতিযোগিতাভূমিকাভিনয়রচনা প্রতিযোগিতাদেয়াল পত্রিকা তৈরি ইত্যাদিতে পাঠ সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুকে প্রাধান্য দেয়া
  • শিখন শেখানো কৌশলে বৈচিত্র এনে শিক্ষার্থীকে শিখনের প্রতি আকৃষ্ট করে তোলা এবং শিখনে শিশুদের অংশগ্রহন বৃদ্ধি করা। যেমনখেলার ছলে শিখন শেখানো যেতে পারে। শিখন শেখানো কার্যক্রমকে শুধুমাত্র শ্রেণিকক্ষে আবদ্ধ না রেখে দৈনিক সমাবেশশারীরি কসরতের মাধ্যমে সংখ্যা ননাদৈনিক দুটো করে শব্দ (ইংরেজি  বাংলাশেখানো যায়। এছাড়াও শ্রেণিকক্ষে দেয়াল রেমিডিয়াল তৈরি করা যায় এবং প্রতিটি খেলার ছলে (দেয়াল থেকে বিভিন্ন শব্দ খুঁজে বের করাঅনুশীলন করা
  • শিখনকালীন মূল্যায়নের মাধ্যমে পূর্ববর্তী শ্রেণির ঘাটতি সম্বলিত বিষয়সমূহ মূল্যায়ন করা এবং আভ্যন্তরীন সমস্যা চিহিুত করে ফিডব্যাক দেয়া
  • নিয়মিত উপস্থিতি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়মুখী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহন  করা। যেমনপ্রথমতবিদ্যালয়ের পরিবেশ  শিখন শেখানো পদ্ধতি আনন্দমূখর করা। যেহেতু শিশুরা সাধারন আমুদে প্রকুতির হয়ে থাকে তাই শিক্ষকদেরও আমুদেস্বতঃস্ফুর্ত  শিশুবান্ধব হতে হবে
  • অভিভাবক  জনপ্রতিনিধিদের সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিদ্যালয়ে তাদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি করা। যেমনঅভিভাবক সমাবেশমা সমাবেশপাশাপাশি পেরেন্টস্ ডে (অর্থ্যাৎ একটি বিশেষ দিন উৎযাপন করা যেখানে পিতামাতার সামনে শিক্ষার্থীরা তাদের অর্জিত বিশেষ দক্ষতা তুলে ধরবে)
  • শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিবন্ধকতা দূর করে শিশুকে প্রদত্ত কাজ সম্প্রাদানের জন্য উৎসাহিত করা এবং যথাযথ ফিডব্যাক প্রদান করা
  • সকল শিক্ষার্থীকে প্রত্যাশিত শিখনফল অর্জনের সহায়তা করতে বহুমূখী অনুশীলনে গুরুপ্ত দেয়া
  • শিক্ষার্থী  শ্রেণিপাঠের অগ্রগতি মাঠ পর্যায়ে শিক্ষা কর্মককর্তাগণকে অবহিত করা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ গ্রহন  বাস্তবায়ন করা 
  • বিদ্যালয়ে শিক্ষন-শিক্ষানোর পাশাপাশি বাড়িতে শিখন চর্চায় সহায়তা করার লক্ষ্যে সাপ্লিমেন্টরী রিডিং ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ করা এবং পরর্বতী কার্যদিবসে শিক্ষার্থীর মুক্ত পরিবেশনার ব্যবস্থা করা
  • শিক্ষার্থীর শিখনস্তর নির্ধারনের লক্ষ্যে তাদের দক্ষতা  যোগ্যতা যাচাই করা এবং প্রতিদিনের পাঠে চলমান মূল্যায়নের ব্যবস্থা করা
  • মাসিকপাক্ষিকসাপ্তাহিক  এ্যাকশন প্ল্যান”  তৈরী করা এবং শিক্ষকের পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন করা

 

করোনাকালীন সৃষ্ট শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি পূরনে শিক্ষকগনই প্রধান নিয়ামক শক্তি হিসাব কাজ করবেন। শিক্ষকগন যাতে সুষ্টুভাবে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করে শিক্ষার্থীর শিখন ঘাটতি পূরন করতে পারেন সেজন্য পূর্ববর্তী ও র্বতমানে শ্রেনির বিষয়বস্তুর সংযোগ রক্ষা করে শ্রেনি কার্যক্রম পরিচালনার ব্যবস্থা করতে হবে।


লেখকঃ মো: মাহবুব হাসান,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ,জলঢাকা, নীলফামারী।

Post a Comment

0 Comments