ফরহাদ ইসলাম জলঢাকা (নীলফামারী) প্রতিনিধিঃনীলফামারীর জলঢাকায় জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক পদে দায়িত্ব পালনের অভিযোগ উঠেছে গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক তহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে। ২০২০ সালের ৩০ আগস্ট হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে পরলোক গমন করেন গাবরোল তহশিলদার পাড়া দি¦-মূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিমল রায়। তৎকালিন করোনা ভাইরাসে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে নিজের ভাইকে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি বানিয়ে শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের পরিপত্র লঙ্ঘন করে এ দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। জানা যায়,গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে তহিদুল ইসলামের জ্যেষ্ঠ দুইজন সহকারী শিক্ষক কর্মরত আছেন। তহিদুল ইসলাম শরীর চর্চা বিষয়ে গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করে ২০০২ সালের ১ জুন এমপিওভুক্ত হন। কিন্ত তিনি পদোন্নতি পাননি। অপর দিকে বাংলা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম ২০০২ সালের ১ জুন এমপিওভুক্ত হন এবং ২০০২ সালের একই তারিখে ইংরেজি বিষয়ে এমপিওভুক্ত হন আনোয়ারুল আলম। এই দুইজন জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষক থাকা সত্বেও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন ১৫ গ্রেড অনুযায়ি তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি তহিদুল ইসলাম। ২০১১ সালের ৬ জুন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের এক পরিপত্রে দেখা যায়,যে বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নেই সে বিদ্যালয়ে জ্যেষ্ঠতম সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার পালন করবে এবং একই তারিখে এমপিওভুক্ত হলে উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক জ্যেষ্ঠ গন্য হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহণের নিয়ম থাকলেও গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে মানা হয়নি সে নিয়ম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন,‘‘বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতির আপন ভাই হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষকদের বাদ দিয়ে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হয়েও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নিয়েছেন তহিদুল ইসলাম। আর এ কারনে আমাদের বাইরের স্কুলের শিক্ষকদের কাছে প্রশ্নের সম্মুক্ষিনও হতে হচ্ছে।’’ অপর দিকে একজন তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার পাওয়ায় ভেঙ্গে পড়েছে ওই বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা। বিদ্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অনুপস্থিত থাকায় চলতি মাসের ১৮ অক্টোবর দুপুর দেড়টায় স্কুল ছুটি দিয়ে নিজ নিজ বাড়ি চলে যান সকল শিক্ষক। এ ঘটনায় ১৯ অক্টোবর ওই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে ব্যাখ্যা চেয়ে নোটিশ প্রদান করেন উপজেলা মাধ্যমিক অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক। ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ সহকারী শিক্ষক আশরাফুল আলম বলেন,‘‘যাকে দিয়ে স্কুল সুন্দরভাবে চলবে সে তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হোক আর চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারি হোক তাকেই প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া দরকার। তবে তহিদুল ইসলাম শরীর চর্চা বিষয়ে এমপিওভুক্ত।’’ এ বিষয়ে গাবরোল তহশিলদার পাড়া দ্বি মুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের শরীর চর্চা শিক্ষক ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তহিদুল ইসলামের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে কোন সদুত্তর না দিয়ে এ প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতে গিয়ে দেখা করার কথা জানান তিনি। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের আপন ভাই ফয়জুল ইসলাম বলেন,‘‘দুই এক সপ্তাহের মধ্যে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব থেকে আমার ভাইকে বাদ দিয়ে অন্য শিক্ষককে দায়িত্ব দেব।’’ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার চঞ্চল কুমার ভৌমিক বলেন,‘‘ এমপিও শীট অনুযায়ি তহিদুল ইসলাম তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি,বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শফিকুল ইসলাম বলেন,‘‘তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারি হয়ে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের কোন সুযোগ নেই,এটি অনিয়ম। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।’’
0 Comments